জেনে নেওয়া যাক গরমে কিভাবে নিজেকে স্বস্তিতে রাখবেন
সবার জানা আছে যে, বছরের ১২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে গরম মাস হলো জুলাই। কিন্তু এটা কি জানি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গরম মাস কোনটি। সম্প্রতি নাসা একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলছে, এখন পর্যন্ত ধারণকৃত ডাটা অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে গরম মাস হলো ২০১৬ সালের জুলাই মাস।
তীব্র গরমে গত কয়েকদিন ধরেই অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনজীবন। বিশেষ করে ঢাকার শহরে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে বাসিন্দাদের কাছে। আর এই অবস্থা বছরান্তেই দেখা যাচ্ছে। গরমের মাত্রারিক্ত অত্যাচারে নগর জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠছে।
বাচ্চা থেকে শুরু করে করে বয়স্ক লোকজন প্রচন্ড তাপদাহে অতিষ্ট হয় উঠেন। জুন-জুলাই মাসে সাধারণত গরম এ রকমই হয়। এ সময় বৃষ্টি কম হয়, তাপমাত্রা বেশি থাকে। এ সময় তাপমাত্রার সাথে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। সে কারণে গরম বেশি অনুভূত হয়।
প্রচণ্ড তাপে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয় তাড়াতাড়ি এবং পানিশূন্যতাজনিত কারণে হিট স্ট্রোকসহ নানা রকম অসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তীব্র গরমে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, শিশুর নিউমোনিয়া, জন্ডিস, আমাশয় রোগীর সংখ্যা।
এই গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। এই সময়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে হবে। কর্মজীবী মানুষ যারা জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন তাদের যথা সম্ভব গরম এড়িয়ে চলা উচিত। চলুন দেখে নেই এই গরমে কিভাবে নিজেকে স্বস্তিতে রাখবেন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ছোট বেলা থেকেই আমরা পড়ে এসেছি পানির অপর নাম জীবন । কথা সাথে পানির কাজে ভারী মিল রয়েছে। গরমে সুস্থ থাকার প্রধান উপায় পরিমিত পানি পান করা। প্রতিদিন কম পক্ষে গড়ে দুই থেকে আড়াই লিটার অর্থাৎ সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি দেহের অভ্যন্তরকে পরিশোধিত করে। পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে দেহ সুস্থ সতেজ ও পুষ্ট রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্র ও পাকস্থলীর প্রদাহ, রক্ত আমাশয় ইত্যাদি রোগ এর ঝুঁকি হ্রাস করে।
প্রচন্ড গরমে আমরা বাসায় ঢুকে প্রথমেই যেই কাজটি করি তা হল ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে খাওয়া মোটেও এই কাজটি করতে যাবেন না । বরং ফ্রিজ থেকে পানি বের করে নরমাল পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন। অন্যথায় সাময়িক স্বস্থির বদলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
শরবত পান করুন ও মৌসমী ফল খান
পানি গ্রহনের পাশা পাশি লেবু, আম , তেতুল , বেল, ইসুবগুল ইত্যাদি দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। পানি শূন্যতা পাশাপাশি কিছু পুষ্টিও পাবেন। অন্য দিকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ পান করা উচিত নয়, কারণ বাড়তি গ্লুকোজ শরীরে তাপ উৎপাদন করে। যা এই গরমে বিপদের কারণ হতে পারে। গরমের অন্যান্য খাবারের মধ্য মৌসুমী ফল খাওয়া উচিত যেমন: পেয়ারা, তরমুজ, ফুটি, বাঙি, লিচু, আম, কাঁঠাল, জাম, ইত্যাদি। এগুলো পুস্টি চাহিদার যোগান দেয় এবং শরীর ভাল রাখতে সহায়তা করবে।
তবে গরমে চা কফি ইত্যাদি ভারী পানীয় এড়িয়ে চলাই উত্তম।
কি ধরনের পোশাক পড়বেন ?
গরমে সুতির হালকা ঢিলে ঢালা পোশাক পড়ুন। এতে গরমেও অনেক বেশি স্বস্তিতে থাকবেন। গরমকালে আনুষ্ঠানিক-পোশাক পরা মানে যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে থাকা। তাই অফিসের মিটিং বা আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে ‘ফর্মাল’ পোশাকের সব কিছু পরার দরকার নেই। যতখানি বাদ দেওয়া যায় ততখানি বাদ দিয়ে পরুন। সেটা হতে পারে ফর্মাল প্যান্টের সঙ্গে টিশার্ট। কাপড়ের মধ্যে লিনেন, সুতি গরমের মধ্যে অন্য গুলোর তুলনায় বেশি স্বস্তি দেবে।
ছোট কিন্তু ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা আছে এরকম ব্যাগপ্যাক বাছাই করতে হবে। যেখানে প্রয়োজনীয় সব জিনিস ধরবে। চামড়া, সুয়েড কিংবা ক্যানভাস কাপড়ের ব্যাকপ্যাক হতে পারে স্টাইলের অংশ।
গরমে স্নিকার পরা আরামের। সেটা সাদা হলে স্বস্তিও দেবে। এই গরমে তাই বেছে নিতে পারেন হালকা রংয়ের স্নিকার। পরতে পারেন মোজাসহ কিংবা ছাড়া।
গরমে সানগ্লাস ছাড়া ফ্যাশন পূর্ণ হয় না। এটা শুধু কড়া রোদ থেকে চোখই বাঁচায় না পাশাপাশি ব্যক্তিত্বের প্রকাশ হিসেবে ভাবভঙ্গিতেও নিয়ে আসে পরিবর্তন।
গরমে খাবার
গরমে সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে, যাতে খাবারের পর খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল, করলা, পেঁপে, কচু, বরবটি, চালকুমড়া, শসা ইত্যাদি। এছাড়া মাছ মাংস ও ডিম ও নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে। তবে গরমে অবশ্যই খাবারের সমতা থাকা উচিৎ।
পানীয় গরমে ঠাণ্ডা পানীয় শরীর ও মনকে জুড়িয়ে দেয়। চাইলে এমন পানীয়তে ভরসা করতে পারেন। তবে অবশ্যই বাজার চলতি কার্বোনেটেড পানীয়তে ভরসা করবেন না। বদলে ফলের রস ও বাড়িতে তৈরি নানা পানীয় পান করুন।
ডাব খান
প্রচন্ড তাপদাহে বিভিন্ন শরবত ও কোমল পানীয়র পাশাপাশি চাহিদা ডাবের চাহিদা বেড়ে যায় । অন্যান পানীয়র তুলনায় ডাবের পানি শতভাগ নিরাপদ। তবে দাম অনেক বেশী হওয়ায় নিম্ন বিত্তের তৃষ্ণার্ত মানুষ ডাবের পানির পরিবর্তে হাট বাজারে বিক্রি হওয়া বেলের শরবত, আখের গুড়ের শরবতসহ বিভিন্ন কোমল পানীয় পান করেন । তবে এ ক্ষেত্রে এ সব কোমল পানীয় পান না করাই উত্তম, রাস্তার পাশের এই সব খাবার খেয়ে জন্ডিস বাধানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে ডাব কিনে খেতে না পারলে অবশ্যই বাইরে বের হবার সময় পরিমান মত পানি নিয়ে বের হোন।
তা না হলে ইকোলাই ব্যকটেরিয়া সহ বিভিন্ন প্রকার জীবানু দ্বারা আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস সহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এতে করে পরবর্তী সময়ে লিভার মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর পরেও কেউ জেনে আবার কেউ না জেনে পান করছেন খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া এসব শরবত ও পানীয়।