কেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারী আপনার চেয়েও বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন?
আপনার পাশের বাসার এক প্রতিবেশী নিয়মিত নামায আদায় করে। কোনদিন তাকে আপনি নামায মিস করতে দেখেন নি। একান্ত নিষ্ঠার সাথে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। সে তুলনায় আপনি নামে মাত্র একজন মুসলিম, কাজে নয়। আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায তো পড়েনই না, নিতান্তই লজ্জায় পড়তে হবে ভেবে জুম’আর দিনে কোন মতে সবার শেষ কাতারে দুই রাকাআত নামায তাড়াহুড়ো করে আদায় করে বাড়ি ফিরেন। সেই একদিন নামাযের জন্যে যখন ওযু করেন তখনও আপনার মধ্যে তাড়াহুড়োর কমতি থাকেনা ! মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ধুরুম ধারুম করে ওযু করে বের হতে পারলেই যেন বেচে যান ! ওযু নিয়ে কেন এতো খামখেয়ালী?
কোন অনুষ্ঠানে বা কোন মেয়ের সাথে ঘুরতে গেলে হয়তো ঠিকই রঙ মেখে সঙ সেজে চলে যাবেন। দামী পারফিউম, জেল ব্যবহার করবেন। ফেইস ওয়াশ দিয়ে চৌদ্দবার মুখ ধুবেন, মুখে ফেয়ারনেস ক্রিম মাখবেন… আরো কত কি ! প্রয়োজনের সময় আপনার পরিচ্ছন্ন হওয়ার চেষ্টার অন্ত থাকেনা। আর বাকি সময়? অন্য সময় কি পরিষ্কার থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই?
সপ্তাহে একদিন দুইদিন পর পর গোসল করেন, এক কাপড় আধোয়াভাবেই তিন চার দিন পড়েন। তাও আপনি নিজেকে স্মার্ট দাবী করেন? যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনে করেন? আর আপনার পাশের বাসার প্রতিবেশীকে গেঁয়ো আর সেকেলে মনে করেন? আপনাকে বলছি ! জ্বি আপনাকেই বলছি ! আপনার সেই তথাকথিত গেঁয়ো সেকেলে প্রতিবেশীই আপনার থেকে বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ! অবাক হচ্ছেন? দেখুন কিভাবে…
- তিনি দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের জন্যে গড়ে পনেরোবার করে দু’হাত ও দু”পা ধুচ্ছেন। যেখানে আপনি তিন-চারদিন মিলিয়েও এতোবার হাত-পা ধোবেন কিনা সন্দেহ !
- তিনি প্রতিদিনই গড়ে পনেরোবার মুখ ধুচ্ছেন। যেখানে আপনি ফেইস ওয়াশ ব্যবহার করলেও দিনে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনবার মুখ ধুচ্ছেন মাত্র। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সংখ্যা কম বেশি হতে পারে, তবে তা কখনোই নামাযী ব্যক্তির সমান হবেনা।
- নামাযী ব্যক্তি দিনে পাঁচবার তার মাথা, ঘাড়, কান মাসেহ করছেন ! আপনি? একবারও না। গোসল করলে হয়তো খানিকটা সময়ের জন্যে ঘাড় পরিষ্কারের সুযোগ পাবেন। আর কান? সেতো দুই তিন সপ্তাহে একবার পরিষ্কার করবেন !
- তিনি দিনে পনেরোবার তার মুখ পরিষ্কার করছেন। একজন মানুষ দিনে পনেরোবার মুখ পরিষ্কার করলে তার মুখে দুর্গন্ধ থাকার নূন্যতম সম্ভাবনাও নেই। আর আপনি সর্বোচ্চ দিনে একবার কি দু’বার মুখ পরিষ্কার করছেন।
- তিনি প্রতিদিনই পনেরোবার করে নাকের ভেতরে পানি দিচ্ছেন আর ময়লা পরিষ্কার করে ফেলছেন। দিনে পনেরোবার নাক পরিষ্কার করলে কারো নাকেই ময়লা থাকার সম্ভাবনা নেই। আর আপনি হয়তো সময় সুযোগ পেলেই নাকেই আঙ্গুল পুড়ে দিচ্ছেন। খুচিয়ে খুচিয়ে… বলতেও তো গা শিড়শিড় করে…
- এতো গেলো শুধু ওযুর কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে নামাযী ব্যক্তির সাথে আপনার পার্থক্য। নামাযী ব্যক্তি প্রতিদিন অন্তত একবার গোসল করবেনই… আর যেহেতু তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন সেহেতু তিনি গোসলেও কুরআন ও সুন্নাহ কে মেনে চলবেন। তাই গোসলের সময়েও তাকে পুনরায় গড়গড়া সহ কুলি করতে হবে, নাকে পানি দিতে হবে। আগের পনেরোবারের সাথে আরো তিনবার করে যোগ করুন ! আঠারো বার তিনি পরিষ্কার করছেন। আর সমস্ত শরীরও তাকে পরিষ্কার করতে হবে। যেখানে শীতের দিনে আপনাকে গোসলের জন্যে খুজেই পাওয়া দায় হয়ে যায় !
- নামায সঠিকভাবে আদায়ের জন্যে কাপড়ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। নোংরা বা নাপাক কাপড় পরে নামায হবেনা। তাই নামাযী ব্যক্তিকে দিনের সবসময়েই নিশ্চিত করতে হবে যেনো তিনি নামাযের জন্যে উপযুক্ত পোষাকে থাকেন। আর আপনি?
- আপনার প্রসাবের বেগ পেলে আপনার জন্যে হালকা খোলা জায়গা বা একটু আড়াল হলেই হলো। আপনি দাঁড়িয়েই আপনার প্রয়োজন মেটাবেন। অনেকেতো টয়লেটে গিয়েও বসার কষ্টটুকু না করে দাঁড়িয়েই শুরু করে দেন। আর প্রসাব শেষে যখন বেরিয়ে আসতে যান তখনও অনুভব করেন যে এক দু’ফোটা প্রসাব ভেতরেই বের হয়ে এসেছে ! ছিহ ! আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারীকে সকল প্রকার নাপাকী থেকে দূরে থাকতে হবে। তিনি কখনোই দাঁড়িয়ে প্রসাব করতে পারবেন না। তাকে অবশ্যই ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করতে হবে। টিস্যু, কাপড় আর পানিতো তার জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়। তুলনা করুন !
- পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছাড়াও তিনি যদি তাহাজ্জুতের নামায আদায় করতে চান এবং নফল নামায আদায় করতে চান তাহলে তিনি আবারো নিজেকে পরিষ্কার করবেন।
সূরা তাওবার ১০৮ তম আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন –
…যারা পবিত্র হয় আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন। আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালোবাসেন।
উপরের বিষয়গুলো জানার পরেও কি আপনি নিজেকে স্মার্ট আর পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারীকে গেঁয়ো বলবেন খ্যাত বলবেন? প্রশ্ন রইলো আপনার কাছে ! নিজেকেই প্রশ্ন করুন…