Rajshahi University- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর আদ্যপান্ত
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের তথ্যানুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২ টি । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্বে স্থাপিত হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই। হাজারো স্মৃতিকে বুকে নিয়ে ১৯৫৩ সাল থেকে দেশের উচ্চ শিক্ষায় অবদান রেখে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধ ও তৎকালীন নানা আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান গৌরবোজ্জ্বল হয়ে আছে।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আন্দোলনে অবদান রেখেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকগণ । শহীদ ড.শামসুজ্জোহা, শহীদ ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দরের কথা যেন না বললেই নয়। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে রাজশাহী শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির ওপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
রাজশাহী এলাকার শিক্ষাদিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠা করা । সে সময় কলেজে কিছু কাল আইন বিভাগ সহ পোষ্ট গ্রাজুয়েট চালু ছিল, অল্প সময় পরেই এ সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উচ্চ শিক্ষার জন্যে ঐ সময়ই রাজশাহীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত ভেঙে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হয়। সে সময় বাংলাদেশ ছিল পাকিস্থানের অন্তর্গত। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে।
মূলত ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর রাজশাহীতে স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রথম দাবি অবশ্য ওঠে রাজশাহী কলেজেই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার । এই আন্দোলনে একাত্মা ঘোষণা করেন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে।
রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শহরের ভুবন মোহন পার্কে । এর পরে ১৩ই ফেব্রুয়ারী এ পার্কে আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ এমএলএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি জনসভা । এ জনসভায় বক্তব্য রাখেন ইদ্রিস আহমেদ এমএলএ, প্রভাষ চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আব্দুল জব্বার প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ।
ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি তীব্র হতে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ জন ছাত্রনেতা ! পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানসহ আরো কিছু সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয় ।
১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব । মাদার বখশের এই জ্বালাময়ী বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও। এভাবে একের পর এক আন্দালনের মুখে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়।
অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাবি প্রতিষ্ঠা আইন পাস হয়। একই বছরের ৬ জুলাই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. ইতরাৎ হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকেসঙ্গে নিয়ে মাদারবখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়
১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাবির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৪ সালে পদ্মাতীরের বড় কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির ওপরতলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠির উপর তলায়।
রাবির বিখ্যাত প্যারিস রোড
বড়কুঠির কাছেই তত্কালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিত্সাকেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ওসমান গনি ও প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত হন অধ্যাপক আব্দুল করিম। এ সময় রাজশাহী শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাড়িতে ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে । বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়
ভাড়া বাড়ি আর অন্যের স্থাপনায় আর কত ? ১৯৫৮ সালে বিদ্যমান বর্তমান ক্যাম্পাসের দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। এরপর ১৯৬১ সালে রাবির শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের সবুজ চত্বরে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত করতে করতে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। পুরুদমে শুরু হয় একটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা।
সাতটি বিভাগে ১৫৬ জন ছাত্র এবং পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬১ সালে রাবির শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে। এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বিভিন্ন সময়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ছয় দফা, ’৬৯-র গণআন্দোলন, ’৭০-র সাধারণ নির্বাচন, ’৭১-র মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৯০-র স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-শিক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েছে অত্যাচার আর শোষণের বিরুদ্ধে। ষাটের দশকের শেষদিকে এই ভূখণ্ড যখন গণআন্দোলনে উত্তাল, তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও স্বাধিকার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৯৬৬-এর ছয় দফা ও ১১ দফা দাবিতে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে মিছিল করা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান শহীদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সেনানিবাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করা হয়। এই দুটি হত্যাকান্ডে আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে ওঠে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, সান্ধ্যকালীন আইন জারি করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল করার চেষ্টা করে।
১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি গণঅভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিজের জীবনের বিনিময়ে ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক তৎকালীন প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা।১৯৬১ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তিনি বিদেশ থেকে পিএইচডি, ডিআইসি এবং এআরসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল তাকে প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলিত করে তুলেছিলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেইন গেটের সামনের মহাসড়কে পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করছিল। খবর পেয়ে প্রক্টর ড. জোহা স্যার মেইন গেটে ছুটে যান। তখন তিনি বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
শিক্ষার্থীরা পিছু হটতে না চাইলে পাকবাহিনীর ক্যাপ্টেন হাদী তাদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেন। তিনি চিৎকার করে তাদের গুলি না করা অনুরোধ করেন। এমনকি তিনি সৈন্যদের উদ্দেশে বলেন, ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরে যাবে। এক পর্যায়ে বেলা ১১টার সময় ক্যাপ্টেন হাদী তার পিস্তল দিয়ে ড. জোহাকে গুলি করে। সেদিন ড. জোহার বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল মতিহারের সবুজ চত্বর। অবশেষে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ড. শামসুজ্জোহা মৃত্যর কোলে ঢলে পড়েন। সেদিন তিনি তার জীবন বলিদান করে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করেছিলেন পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে।
ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা
ড. শামসুজ্জোহা হচ্ছেন পাক হানাদারদের হাতে নিহত প্রথম বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর ফলেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করেছিল। ড. জোহার মৃত্যুতে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। প্রতিবাদে টলে উঠেছিল আইয়ুব খানের গদি, পতন হয়েছিল সেই স্বৈরশাসকের। তারই ফলে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথের একটি ধাপ পেরিয়ে এসেছিল মুক্তিকামী বাঙালী।
জোহার মৃত্যু তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো এবং প্রভাব ছিলো সূদূরপ্রসারী, যা দেশকে স্বাধীন করতে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলো। দেশ স্বাধীনের পর তার অবদানের কৃতজ্ঞতাস্বরুপ তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবির সম্মানে ভূষিত করা হয়। তার মৃত্যুর পরপরই তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার নামানুসারে নবনির্মিত আবাসিক হলের নামকরণ করেন শহীদ শামসুজ্জোহা হল
মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্বেই বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ হবিবুর রহমান, শহীদ মীর আবদুল কাইয়ুম , শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার। অকথ্য নির্যাতন ভোগ করেছিলেন গণিত বিভাগের শিক্ষক মজিবর রহমান। এছাড়া আরও ত্রিশ জন ছাত্র, কর্মচারী-কর্মকর্তাও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
অবকাঠামো ও শিক্ষা সহায়ক কাঠামো
প্রায় ৩০৪ হেক্টরজুড়ে (৭৫৩ একর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৭টি বিভাগে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ১৭টি আবাসিক হল। এর মধ্যে ছাত্রদের জন্য ১১টি, ছাত্রীদের ৫টি হল এবং গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ডরমিটরি।
পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তজুড়ে রয়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রয়েছে দেশের প্রথম জাদুঘরখ্যাত বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর, শহীদ মিনার, রয়েছে শিল্পী নিতুন কুণ্ডের অমর কীর্তি মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘সাবাশ বাংলাদেশ’। বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা নামক একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী সুউচ্চ মেটালিক টাওয়ার, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য বিদ্যার্ঘ্য, ড. জোহার প্রতিকৃতি ও বিজয় সাগর।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি সক্রিয় সাংবাদিক সংগঠন রয়েছে। বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ডিবেটিং ফোরাম (বিএফডিএফ) ও গোল্ড বংলা প্রধান দুটি বিতর্ক সংগঠন। এছাড়া আছে বিভিন্ন হল ভিত্তিক বিতর্ক ক্লাব।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতন বা সহায়তা করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তায় রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হায়ার স্টাডি ক্লাব । উদ্যোগ, বিজনেস এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছে স্টার্টআপ আরইউ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম শিক্ষার্থীদের বই পাঠে মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার একটি প্লার্টফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের শিক্ষা সহায়ক হিসেবে এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার । গ্রন্থাগারে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি দ্রুতগতির ওয়াইফাই জোন রয়েছে। সম্পুর্ন গ্রন্থাগারটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। প্রায় চার লাখ দেশি-বিদেশি বই সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজনীয় বই সহ রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ। গ্রন্থাগার খোলা থাকে প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮.১৫ থেকে সন্ধ্যা ৭.৪৫ পর্যন্ত। শুক্রবার দুপুর ৩.০০ থেকে সন্ধ্যা ৭.৪৫ পর্যন্ত।
রাবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি
গ্রন্থাগারের নিচতলায় ধার শাখা রয়েছে যেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রন্থাগার কার্ড দেখিয়ে বই ধার নিতে পারে। প্রায় সম্পুর্ন নিচতলা জুড়ে সকল বইয়ের কপি এবং পুরাতন পত্র-পত্রিকা সংরক্ষন করা আছে। গ্রন্থাগারের দোতলায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দুটি পাঠ কক্ষ রয়েছে। তিনতলায় রয়েছে সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট কক্ষ ও গ্রন্থাগার প্রশাসকের কার্যালয়। দোতলায় প্রবেশ পথে একটি ক্যাটলগ ক্যাবিনেট রয়েছে। ক্যাবিনেটে সংরক্ষিত কার্ডে বইয়ের নাম এবং গ্রন্থাকারের নাম ক্রমানুসারে সাজানো থাকে। আরো আছে একটি কক্ষে বই ফটোকপি করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
রয়েছে বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরী, বিভাগীয় কম্পিউটার ল্যাব, ইন্সটিটিউট ও অনুষদ লাইব্রেরী, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ও লাইব্রেরী এবং কম্পিউটার সেন্টার। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ভবনগুলোতে রয়েছে ওয়াইফাই ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা।
সংস্কৃতি চর্চার জন্য রয়েছে শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৫টি সংগঠন নিয়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। এবং খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, সুমিং পুলসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’টি প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। মূল ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট পেরিয়ে বৃক্ষশোভিত গোল চত্বরে সামনে অবস্থিত। গোল চত্বরে শায়িত রয়েছে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। প্রশাসন ভবনের নীচ তলায় রয়েছে জনসংযোগ দপ্তর, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর, তথ্য সেল, বীমা ইউনিট, একাডেমিক শাখার একাংশ, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের একাংশ, টেলিফোন শাখা। দ্বিতীয় তলায় দেখা আছে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্টার দপ্তর, সংস্থাপন শাখা – ১, অর্থ ও হিসাব দপ্তর, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন দপ্তর, লিগ্যাল সেল। তিনতলায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন দপ্তর ও সংস্থাপন শাখা – ২।
প্রশাসনিক ভবন
প্রসাশন ভবন ২ নামে ভবনটি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পশ্চিমে অবস্থান করছে। এই ভবনে প্রকৌশল দপ্তর, এস্টেট শাখা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন দপ্তরের বিল শাখা, একডেমিক শাখার একাংশ, কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার, প্রকাশনা দপ্তর ও কৃষি প্রকল্প অফিস অবস্থিত। এই ভবনের পাশেই অগ্রণী ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এছাড়াও সিনেট ভবন, ডিনস কমপ্লেক্স, রবীন্দ্র ভবন, শহিদুল্লাহ কলাভবন, মমতাজউদ্দিন কলা ভবন , সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন , প্রথম বিজ্ঞানভবন , দ্বিতীয় বিজ্ঞানভবন , তৃতীয় বিজ্ঞানভবন , চতুর্থ বিজ্ঞানভবন ,কৃষি অনুষদ ভবন, চারুকলা বিভাগ, নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাস, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি), কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, বিজ্ঞান ওয়ার্কশপ, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন, বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র, ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস), বিএনসিসি ভবন, জুবেরী ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাপাখানা , কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, পরিবহন অফিস নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগুলো নানা কাজের উপযোগী করে স্থাপন করা হয়েছে।
নীল-সাদা বাসঃ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে শহর ভ্রমণের আনন্দটা অন্যরকম। বাংলাদেশের হাতেগোনা ৩-৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এত চমৎকার ট্রান্সপোর্ট সার্ভিস চালু আছে। রাবি’র শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৯ টি বাস রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব ফিলিং স্টেশন। অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসে চড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখ। কিন্তু রাবি’র বাস সংখ্যা ঢাবির চাইতে ঢের বেশি। এমনকি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সংখ্যা বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ!
রাবির পরিবহন পুল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক
প্রত্যেকটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রতীক রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকের একদম বাইরের দিকে রয়েছে একটি বৃত্ত যা বিশ্বের প্রতীক নির্দেশ করে। বৃত্তের ভীতরে রয়েছে একটি উন্মুক্ত গ্রন্থ যা জ্ঞানের প্রতীক আর বইয়ে রয়েছে শাপলা ফুল যা সৌন্দর্য, পবিত্রতা ও জাতীয় প্রতীক। আর এটি এটি সূর্য অর্থেও প্রাণ ও শক্তির প্রতীক। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতীকের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে নকশা আহ্বান করা হয়। শিল্পী গোলাম সারওয়ারের আঁকা মূল নকশা নির্বাচনের পর কিছুটা পরিবর্তন করে বর্তমান প্রতীকে রুপ দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী হাশেম খান।
স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
-
শহীদ মিনার কমপ্লেক্স
ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৬৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত আগ্রহের ফলে শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণে আম বাগানের মধ্যে তৈরি করেছিলেন শহীদ মিনার। রাবির প্রথম শহীদ মিনারটি তৈরিতে যাদের অবদান উল্লেখ্যযোগ্য তারা হলেন, আব্দুল হামিদ, আব্দুর রাজ্জাক, বায়েজিদ আহমেদ, শমসের আলী, আহসানুল করিম, ওমর ফারুক, সেলিমুজ্জামান, আবুল হোসেন, আবুল কাশেম, আব্দুল হাই, সাইদুর রহমান, একরামুল হক খুদ, নজরুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান সুজা, প্রভাত কুমার প্রমুখ।
- পরে ১৯৬৪-৬৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রচেষ্টায় শহীদ মিনারটি পূর্ণাঙ্গ রুপ পায়। যদিও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক বাহিনী শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা ১৩৭৯ সালের ২৬ বৈশাখ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ মিনারটি বর্তমান স্থানে পুনরায় ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং বাংলা ৯ বৈশাখ ১৩৯২ বা ২৩ এপ্রিল ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী এম. মনসুর আলী এর উদ্বোধন করেন।
-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রশাসন ভবনের পূর্বে অবস্থিত এই শহীদ মিনারটি রাজশাহীর অন্যতম স্থাপত্য কীর্তি। শহীদ মিনারটি ২ লাখ ৯ হাজার বর্গফুট বা চার একর ভূমিতে ১২ ফুট উচু ৬ কোণা প্ল্যাট ফর্মের উপর ৫৬ ফুট লম্বা মূল শহীদ মিনারটিতে রয়েছে চারটি সাদা রঙের স্তম্ভ। মিনারে ওঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি। পেছনেই দুটি ম্যুরালে অঙ্কিত রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের নানা চিত্র। শহীদ মিনারের পটভূমিতে আছে বিখ্যাত শিল্পী মুর্তজা বশীরের ৩২১৬ ফুটের বিশাল ম্যুরাল। শিল্পী ফনীন্দ্রনাথ রায়েরও একটি ম্যুরালও আছে এই শহীদ মিনারে।
-
সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তির স্মারক এই সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ২০০৩ সালে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এই সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার। রাজশাহীর সন্তান মৃণাল হক ছিলেন এই নান্দনিক স্থাপনার ভাস্কর। ।
সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার
বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবন ও শহীদ শামসুজ্জোহা কবরস্থানের সামনে অবস্থিত এই সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের প্রতীক। টাওয়ারের সাথে লাগানো আছে ইস্পাতের তৈরী একটি ম্যুরাল। যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে সভ্যতার ক্রমবিকাশ।
সাবাশ বাংলাদেশ
সাবাশ বাংলাদেশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত ভাস্কর্যগুলোর অন্যতম। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। এর স্থপতি শিল্পী নিতুন কুণ্ডু। স্বাধীনতার জ্বলন্ত প্রমাণকে ধরে রাখার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্মারক ভাস্কর্য সাবাশ বাংলাদেশ। ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র –শিক্ষক- কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বলিষ্ঠ সাহসী ভূমিকা ছিল। এটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতীকী ভাস্কর্য হল সাবাশ বাংলাদেশ।
সাবাশ বাংলাদেশ
৯৯১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুন্ডুর উপাস্থপনায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজ শেষে হলে এর ফলক উম্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ভাস্কর্যে স্থান পেয়েছে তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার কয়েকটি লাইন। যা হলো
সাবাস বাংলাদেশ
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
-
বিদ্যার্ঘ
- মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ গণিত বিভাগের শিক্ষক হবিবুর রহমান স্মরনে “বিদ্যার্ঘ” স্মারকসৌধটি নির্মিত হয়। এটি শহীদ হবিবুর রহমান হল চত্বরে অবস্থিত| বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিুবর রহমান হল গেট থেকে প্রায় ২০ ফিট সামনে ভাস্কর্যটির নির্মাণ স্থান। এটি নির্মাণ করতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। মহান ২৬ মার্চ, ২০১১ ভাস্কর্যটি উন্মোচন করা হয়। ভাস্কর্যটির স্থপতি হলেন শাওন সগীর সাগর।
-
বিদ্যার্ঘ
-
বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে এই বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভটি অবস্থিত। সমতল ভূমি হতে উচুঁ সিমেন্টের গোলাকার বেদির উপর মাথা তুলে দন্ডায়মান ৪২ ফুট উচু স্মৃতিস্তম্ভ। স্মৃতিস্তম্ভটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার অন্তর্ভূক্ত। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত নিরাপরাধ মানুষকে ধরে নিয়ে এসে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যেই এই স্মৃতিস্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শহীদ শামসুজ্জোহা হলকে তাদের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে।
- এই হলের পেছনে দীর্ঘ ১ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ছিলো বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিতে শত শত নারী-পুরুষকে পাকসেনা ও তাদের দোসররা নিয়ে হত্যা করতো। এই ছাত্রাবাস থেকে আধ মাইল দূরে পূর্বকোণে ১৯৭২ সালের ২৩শে এপ্রিল আবিষ্কৃত হয় একটি গণকবর। প্রতিদিনই অগণিত নারী-পুরুষকে হাত বাঁধা অবস্থায় জোহা হলের এই বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হত।
-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ও ইনস্টিটিউটসমূহ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দ্বিতীয় বৃহতম বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১০টি অনুষদের অধীনে ৫২টি বিভাগ রয়েছে এবং অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪১টি; যার মধ্যে সরকারি ১১টি ও বেসকারি ২৪টি। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে ৫টি।
১. কলা অনুষদ
২. বিজ্ঞান অনুষদ
৩. প্রকৌশল অনুষদ
৪. কৃষি অনুষদ
৫. বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ
৬. সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
৭. আইন অনুষদ
৮. জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ
৯. চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদ
১০। চারুকলা অনুষদ তথ্যঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ও ইনস্টিটিউটসমূহ
প্রদত্ত ডিগ্রীসমূহ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বমানের নিম্নলিখিত ডিগ্রী প্রদান করা হয়:-
স্নাতক (অনার্স) ঃ বিএ, বিএফএ, বিপিএ, বিএসসি, বিফার্ম, এলএলবি, বিবিএ, বিএসএস, বিএসসি এজি, বিএসসি ফিশারীজ।
স্নাতক ঃ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি ( পোস্ট বেসিক) নার্সিং/পাবলিল হেলথ নার্সিং, বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজি ( ল্যাবরেটরি/ডেন্টাল)।
স্নাতকোত্তরঃ এমএ, এমএফএ, এমপিএ, এমএসসি, এমফার্ম, এলএলএম, এমবিএ, এমএসএস, এমএস এজি, এমএস ফিশারীজ, এমপিএস।
বৃত্তিমূলকঃ এমবিবিএস, বিডিএস, ডিভিএম।
স্নাতকোত্তর (চিকিৎসা)ঃ এমফিল, এমএস, এমডি, এমপিএইচ, ডিপ্লোমা।
উচ্চতরঃ এমফিল, পিএইচডি।
অন্যান্যঃ সার্টিফিকেট ইন ল্যাংগুয়েজেস, সিনিয়র সার্টিফিকেট ইন ল্যাংগুয়েজেস, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জেনারেল সেরিকালচার, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন।
আবাসিক হল সমূহ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমূহের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হল আবাসিকগুলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ১৭টি হল এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের ডরমেটরি রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি হল ছেলেদের এবং ৬টি মেয়েদের হল।
- ছেলেদের হল
- ছেলেদের সবগুলো হল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে অবস্থিত। ১১টি হলগুলো হলঃ
- মতিহার হল
- শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল
- শহীদ হবিবুর রহমান হল
- মাদার বখ্শ হল
- নবাব আবদুল লতিফ হল
- সৈয়দ আমীর আলী হল
- শহীদ শামসুজ্জোহা হল
- শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী হল
- জিয়াউর রহমান হল
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
- শাহ্ মাখদুম হল
- মেয়েদের হল
- মেয়েদের ছয়টি হল মূল ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে অবস্থিত।
- বেগম রোকেয়া হল
- রহমতুন্নেসা হল
- বেগম খালেদা জিয়া হল
- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা হল
- মুন্নুজান হল
- তাপসী রাবেয়া হল
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত। ইতিহাস ঐতিহ্যের দিক দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বয়ংসম্পূর্ণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটে সম্প্রতি সময়ে ৪ হাজার ১১৯টি আসনের বিপরীতে মোট ৩ লাখের উপরে আবেদন জমা পড়ে । আবেদনকারী বেশি হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা বেশি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট অনুযায়ী বিভাগ ও ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১১ টি ইউনিটে পরীক্ষা হয়। যথাক্রমে:
এ ইউনিট
এ ইউনিটে দর্শন, ইতিহাস, ইংরেজি, বাংলা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ভাষা, আরবী, ইসলামিক স্টাডিজ, নাট্যকলা, সঙ্গীত ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ রয়েছে।
বি ইউনিট
বি ইউনিটে আইন এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগ দুটি রয়েছে।
সি ইউনিট
এই ইউনিটে গণিত,পদার্থবিজ্ঞান ,রসায়ন ,পরিসংখ্যান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, ফার্মেসী, পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ফলিত গণিত, শরীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।
ডি ইউনিট
ডি ইউনিটে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স,ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগগুলো রয়েছে।
ই ইউনিট
ই ইউনিটে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট,লোক প্রশাসন, নৃবিজ্ঞান, ফোকলোর ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ রয়েছে।
এফ ইউনিট
এফ ইউনিটে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা ,ভূ-তত্ত্ব খনিবিদ্যা, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।
জি ইউনিট
এগ্রোনমীএন্ডএগ্রিকালচারালএক্সটেনশন,ফিশারীজ,ভেটেরিনারী এন্ড এনিমেল সায়েন্সেসক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগগুলো রয়েছে এই ইউনিটে।
এইচ ইউনিট
এইচ ইউনিটে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স এন্ডইঞ্জিনিয়ারিং,ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ রয়েছে।
আই ইউনিট
আই ইউনিটে চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্যগ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ রয়েছে।
জে ইউনিট
জে ইউনিটে ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগ রয়েছে।
কে ইউনিট
কে ইউনিটে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভাগ রয়েছে।
ভর্তির আবেদনের যোগ্যতাঃ
আমরা সর্বশেষ ২০১৮-১৯ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম থেকে আবদনের যোগ্যতা তুলে ধরছি। হয়ত পরের বার পরিবর্তন হলেও হতে পারে !
২০১২, ২০১৩ , ২০১৪ ও ২০১৫ সালের এসএসসি/সমমান এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের (অর্থাৎ সর্বশেষ বছরে বা তার আগের বছরে এইচ এস সি সমমান ও সে জন্যে স্বাভাবিক সময়ে এস এস সি ) এইচএসসি/সমমান, ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স, বিএফএ(প্রাক), বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষা বোডের্র অধীনে এসএসসি (ভকেশনাল) ও এইচএসসি (ভকেশনাল), O লেভেল ও A লেভেল এবং অন্যান্য সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরাই [এসএসসি বা এইচএসসি সমমান নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ] কেবল ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে। সনাতন পদ্ধতিতে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারবে না। [ কেবল বিএফএ(প্রাক) ডিগ্রি প্রাপ্ত ছাত্র/ছাত্রীদের ফলাফল এখনও সনাতন পদ্ধতিতে হওয়ায় তাদের আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে, তবে তাদের মার্কশিট/সাটিফিকেট থাকতে হবে ]
- মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০ সহ মোট জিপিএ ৭.০০ পেতে হবে।
- বাণিজ্য শাখা থেকে উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) উত্তীর্ণ জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৭.৫০ পেতে হবে।
- বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের এসএসসি/সমমান ও এইচএসসি/সমমান উভয় পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ সহ মোট জিপিএ ৮.০০ পেতে হবে।
- জিসিই O লেভেল পরীক্ষায় ৫টি বিষয়ে এবং A লেভেল পরীক্ষায় অন্তত ২টি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং উভয় লেভেলে মোট ৭টি বিষয়ের মধ্যে ৪টি বিষয়ে কমপক্ষে B গ্রেড এবং ৩টি বিষয়ে কমপক্ষে C গ্রেড পেতে হবে।
O লেভেল A লেভেল এবং ইংলিশ ভার্সন (ন্যাশনাল কারিকুলাম) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আবেদনকারীদের প্রশ্ন প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হবে। ইংরেজি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক প্রার্থীকে তার Application ID ও মোবাইল নম্বর উল্লেখসহ ২৪-০৯-২০১৭ তারিখের মধ্যে ইমেইল (ru_admission@ru.ac.bd) -এর মাধ্যমে জানাতে হবে।
বি. দ্র. আবেদনকারী যে ইউনিটে আবেদন করুক না কেন সে যে শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে সেই শাখার জন্য নির্ধারিত যোগ্যতা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
যেসব ছাত্র/ছাত্রী A ইউনিটের নাট্যকলা, সঙ্গীত বিভাগে, C ইউনিটের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগ এবং I ইউনিটের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদেরকে ব্যববহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার সময়সূচীসহ বিস্তারিত তথ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি লেখাপড়া বিডি তেও পাওয়া যাবে।
১০০ নম্বরের MCQ পরীক্ষায় পাস নম্বর হবে ৪০। এছাড়া ইউনিট/বিভাগ কর্তৃক আরোপিত শর্ত সংশ্লিষ্ট ইউনিট/বিভাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টনঃ
বিজ্ঞান শাখার জন্য
প্রশ্ন হবে MCQ পদ্ধতিতে।
‘ক’অংশ(আবশ্যিক)- পদার্থ+রসায়ন+গনিত(৩০+৩০+২০) =৮০ নম্বর।
‘খ’অংশ (ঐচ্ছিক)-জীববিজ্ঞান (২০)
‘গ’অংশ(ঐচ্ছিক)-গনিত(২০)
উত্তর করতে হবে ক+খ অথবা ক+গ ।
ক+খ অংশ উত্তরকারীরা এ অনুষদের সকল বিভাগে ভর্তি হতে পারবে
ক+গ অংশ উত্তরকারীরা ফার্মেসী,প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ব্যতীত অন্য বিভাগে ভর্তি হতে পারবে
ফার্মেসী,প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ভর্তি হতে HSCতে পদার্থবিজ্ঞান,রসায়ন,জীববিদ্যা থাকতে হবে
ক’অংশ এ নূন্যতম ২৬ পেতে হবে, খ/গ অংশ এ নূন্যতম ৬ পেতে হবে।
অবিজ্ঞান শাখার জন্য ঃ বাংলা – ৩০ ইংরেজী – ৩০ সাঃ জ্ঞান —৪০
বাংলায় নূন্যতম ১২ এবং ইংরেজীতে নূন্যতম ৭ পেতে হবে।
অবিজ্ঞানের প্রার্থীরা কেবল শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারবে
শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হবে,পাশ নম্বর ৩২।
দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবন
ব্যবসায় প্রশাসন
ইংরেজি ৩০, হিসাব বিজ্ঞান -৩০, ব্যবসায় শিক্ষা (ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা,ফাইন্যান্স, ব্যাংকিং ও বীমা,উৎপাদন ও বিপনন) ৪০
অ-বাণিজ্যদের জন্যঃ বাংলা – ৩০, ইংরেজি – ৩০, সাঃজ্ঞান ও সাঃ গণিত – ৪০
পাশ নম্বর ৪০,পৃথকভাবে কোন বিষয়ে নয়,,সম্মিলিতভাবে সব বিষয় মিলি পেলেই হবে।
সমাজিক বিজ্ঞান
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন – MCQ.. বাংলা ৩৫ , ইংরেজি ৪৫, সাঃজ্ঞান ২০ সর্বমোট ১০০ নম্বর।
অর্থনীতি বিভাগের ক্ষেত্রে HSCতে অর্থনীতি/গণিত/পরিসংখ্যান থাকতে হবে এবং উক্ত বিষয়গুলিতে নূন্যতম A- গ্রেড থাকতে হবে।
জীব ও ভূ বিজ্ঞান অনুষদ
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন ঃ MCQ পদ্ধতিতে প্রশ্ন হবে।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থিদের জন্য-
(i)আবশ্যিক :
পদার্থ+রসায়ন=৬০ নম্বর
(ii)ঐচ্ছিক :
জীববিদ্যা(উদ্ভিদবিদ্যা-২০+প্রাণিবিদ্যা-২০)
/গনিত/ভূগোল/মনোবিজ্ঞান=৪০ নম্বর।
অবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে-
(i) বাংলা+ইংরেজি=৬০ নম্বর।
(ii) ভুগোল/মনোবিজ্ঞান/সাঃজ্ঞান=৪০ নম্বর পরীক্ষা হবে।
মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে।
অবিজ্ঞানের প্রার্থীরা কেবল ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে পারবে।
কৃষি অনুষদ
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন MCQ পদ্ধতিতে প্রশ্ন হবে। জীববিদ্যা-৫০, রসায়ন-২০, পদার্থবিজ্ঞান-২০, ইংরেজী-১০ নম্বর
মোট ১০০ নম্বর
এই অনুষধ শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখার জন্য।
প্রকৌশল অনুষদ
HSC তে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বা গণিতে প্লাস না পাওয়ায় বুয়েট রুয়েট কুয়েটের মত জায়গাগুলোতে পরীক্ষা দিতে পারবে না ভেবে হয়ত অনেকেই হতাশ। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া, এখন কী করবেন ? সমস্যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আপনার অপেক্ষায় রয়েছে !
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন – MCQ পদ্ধতিতে প্রশ্ন হবে । পদার্থে ২০ টি প্রশ্ন -৩০ নম্বর, গনিতে ২০ টি প্রশ্ন -৩০ নম্বর, রসায়নে ২০টি প্রশ্ন -৩০ নম্বর , ICTতে ৫টি প্রশ্ন -৫ নম্বর , ইংরেজী তে ৫টি প্রশ্ন -৫ নম্বর সর্বমোট ১০০ নম্বর।
HSC তে পদার্থবিজ্ঞান,রসায়ন,গণিত থাকতে হবে এবং উক্ত বিষয়গুলিতে নূন্যতম C গ্রেড থাকতে হবে।
এ অনুষদটি শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখার জন্য।
চারুকলা অনুষদ
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন MCQ পদ্ধতিতে প্রশ্ন করা হবে। বাংলা -৩০, ইংরেজি – ৩০, সাঃজ্ঞান -৪০ সর্বমোট ১০০ নম্বর।
পাশ নম্বর ৩০
ড্রইং(ব্যবহারিক) -১০০, পাশ নম্বর ৪০
MCQ ও ব্যবহারিক একসাথে হবে।
পরিক্ষার সময়:১:৩০ ঘন্টা।
ব্যবসায় প্রশাসন (IBA)
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন -MCQ পদ্ধতিতে পরিক্ষা হবে।
বাণিজ্যের জন্যঃ ইংরেজী -৫০, বাণিজ্য -৫০
অবাণিজ্যের জন্যঃ ইংরেজী -৫০ , বুদ্ধিমত্তা ( IQ ) , সাঃজ্ঞান,সাঃবিজ্ঞান ,সাধারণ গণিত -৫০
স্ব স্ব গ্রুপের শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব গ্রুপের প্রশ্নপ্রত্রে পরীক্ষা দিবে
পাশ নম্বর ৪০
শিক্ষা ও গবেষণা (IER)
প্রশ্নের ধরন ও মানবন্টন ঃ MCQ
বাংলা – ২৫, ইংরেজী- ২৫ , সাঃ জ্ঞান – ২০, বুদ্ধিমত্তা দক্ষতা ( Math & IQ)-৩০
পাশ নম্বর ৪০।
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়ার নিয়ম:
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট http://admission.ru.ac.bd হোম পেজে গিয়ে নিচের দিকে থাকা Online Application ক্লিক করতে হবে। পরবর্তী পেজে গিয়ে নিচের দিকে ইংরেজি লেখা ‘স্টার্ট অ্যাপ্লিকেশন’ ক্লিক করলে আবেদনকারীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার রোল, শিক্ষা বোর্ড ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর চাওয়া হবে। সঠিকভাবে তিনটি অপশন পূরণ করে সাবমিট করলে আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় সব ব্যক্তিগত তথ্য এবং এসএসসি ও এইচএসসি’র রেজাল্ট দেখা যাবে।
একইসঙ্গে ওই দুই পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়টি ইউনিটে ভর্তি আবেদনে ওই ভর্তিচ্ছু যোগ্য তাও দেখানো হবে। পছন্দের ইউনিটের পাশে থাকা ‘এপ্লাই’ বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। সেখানে সদ্য তোলা সর্বোচ্চ ৩০০×৪০০ পিক্সেল সাইজ এবং একশ’ কিলোবাইটের জেপিজি ফরম্যাটের রঙিন ছবি আপলোড করতে হবে।
একই ধাপে ‘কোটা’ (যদি থাকে) সুবিধা নিতে আগ্রহীদের তা নির্ধারণ করতে হবে এবং ব্যক্তিগত বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর দিতে হবে। পরবর্তী ধাপে আবেদনকারীকে পূরণ করা পুরো আবেদন ফরম দেখানো হবে। সেখানে সংশোধন প্রক্রিয়া শেষে ‘সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন’ বাটনে ক্লিক করলে আবেদন সম্পন্ন হবে এবং একটি স্লিপ দেখতে পাবে। স্লিপে ‘অ্যাপ্লিকেশন আইডি’, ‘বিল নম্বর’ ও ফি এর পরিমাণ থাকবে।
স্লিপটি প্রিন্ট করে আবেদনকারীকে সংরক্ষণ করতে হবে। স্লিপে থাকা ‘বিল নম্বর’ ব্যবহার করে ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আবেদনের তথ্য ওয়েবসাইটে আপডেট করা হবে। তবে ভর্তিচ্ছু শুধুমাত্র প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার পর রোল নম্বর জানতে পারবেন। আবেদন সম্পন্নের পর ছবি পরিবর্তন করতে চাইলে ২০০ টাকা ফি প্রদান ও যথোপযুক্ত প্রমাণের মাধ্যমে ছবি পরিবর্তন করা যাবে। ওই ছবি সব ইউনিটে ভর্তি আবেদন, ভর্তি প্রক্রিয়া ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে।
বিজ্ঞাপনের ছবিটি দেখতে পারেন। তবে বছর বছর নিয়ম কানুন বা ভর্তি ফি পরিবর্তন হতে পারে।
২০১৮ -২০১৯ শিক্ষা বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি
শেষ কথা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বহু খ্যাতিমান পণ্ডিত, গবেষক ও জ্ঞান তাপসের ছোঁয়ায় মহিমান্বিত । বহুভাষাবিদ ও জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ভাষাবিজ্ঞানী ড. এনামুল হক, প্রখ্যাত তাত্ত্বিক রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত বিচারপতি হাবিবুর রহমান, খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ডেভিড কফ, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বিখ্যাত নৃ-বিজ্ঞানী পিটার বার্টচি, প্রফেসর ড. এমএ বারীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।এখনও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বরেণ্য পণ্ডিত শিক্ষক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বেশিরভাগেরই মূল লক্ষ্য ঢাকার ভেতরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সবার কিন্তু ঢাকার ভেতরে ভর্তির সুযোগ হয় না। এখন প্রশ্ন হল, ঢাকার বাইরে তোমার জন্যবেস্ট চয়েজ কোনটি? আশা করি এত কিছু জানার পরে প্রথম চয়েজ হয়ে উঠবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় !
তথ্য ও ছবিঃ উইকি পিডিয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট, নানা নিউজ ও ওয়েব পোর্টাল