বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দ্রুততম গাড়ি !
আমাদের মধ্যে অনেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন গাড়ি সম্পর্কে জানতে অতটা বেশি আগ্রহী না হলেও মোটামুটি কিছুটা হলেও মাঝে মাঝে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকি। আমার গাড়ি সম্পর্কে জানার আকাশচুম্বী আগ্রহ না থাকলেও বিভিন্ন গাড়ি সম্পর্কে জানার সুযোগ পেলে ভাল-ই লাগে। এর মানে এই ভাববেন না যে আমি গাড়ি-প্রেমিক, আমি শুধু গাড়িকে পছন্দ করি, উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস। 😛
যেসব গাড়ি রাস্তায় সহজেই অনেক স্পীড হাকিয়ে চলতে পারে, অধিকাংশ মানুষই সেইসব গাড়ি কিনতেই ভালবাসেন। তবে বলে নেয়া ভাল যে নিচে আমি যেইসব গাড়ির উল্লেখ করতে যাচ্ছি সেইসব গাড়ি কিনতে হলে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হবে না, ইচ্ছার সাথে পকেটে খুব-ই মোটা অঙ্কের টাকা থাকতে হবে। পৃথিবীর দশটি দ্রুততম গাড়ি সম্পর্কে কিছু মৌলিক কথা নিচে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হল-
১০. পাগানি ওয়াইরা (Pagani Huayra)
এই গাড়িটি মোট ৭২০ হর্সপাওয়ার ও ৭৩৮ পাউন্ড-ফুট টর্কবিশিষ্ট। এটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩০ মাইল(প্রায় ৩৭১ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। বিলাসবহুল এই গাড়িটি এর স্পীড ৩ সেকেন্ডে ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। এছাড়াও ১৩৫০ কেজি ওজনের এই গাড়িটির আছে সেভেন স্পীড অটো ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন যা কিনা এর দ্রুতগতিসম্পন্ন ও বিনা বাধায় চলনে সহায়তা করে। এমনকি এটির গতির জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে “ওয়াইরা-টাটা” এর নামানুসারে যার অর্থ হল “গড অফ ওয়াইন্ডস”। বর্তমানে গাড়িটির প্রাথমিক বাজারমূল্য ১.২৭ মিলিয়ন ডলার (৯.৮৬ কোটি টাকা)। ২০১১ এর জানুয়ারীতে একটি প্রেস রিলিজে এটি কতগুলো ছবির সাথে অনলাইনে আত্মপ্রকাশ পেয়েছিল।
৯. জেনভো এসটি–ওয়ান (Zenvo ST1)
এটি ড্যানিশ ডিজাইনে নির্মিত একটি গাড়ি। গাড়িটির শক্তিশালী ইঞ্জিনের মোট কার্যক্ষমতা ১১০৪ হর্সপাওয়ার ও এটি ১০৫০ পাউন্ড-ফুট টর্কবিশিষ্ট। এই গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় মানে এক ঘণ্টায় মানে ৬০ মিনিটে সর্বোচ্চ ২৩৩ মাইল(৩৭৫ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। এটি রাস্তায় ২.৮ সেকেন্ডে স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। গাড়িটিকে এক্সক্লুসিভ রাখার জন্য এর কোম্পানি জেনভো সিরিজের মাত্র ১৫টি গাড়ি বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশ পাওয়া এই গাড়িটির আছে সিক্স স্পীড ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন। ১৩৭৬ কেজি ওজনের এই গাড়িটির বর্তমান প্রাথমিক বাজারমূল্য হল ১.২৫ মিলিয়ন ডলার (৯.৭০ কোটি টাকা)।
৮. ম্যাকলারেন এফ–ওয়ান (McLaren F1)
এই গাড়িটির ডিজাইন অনেক মানুষেরই পছন্দের ডিজাইন। এর দরজা দুটি, বাদুরের পাখার কথা মনে করিয়ে দেয়। আবার তার মানে এই না যে গাড়িটির স্পীডও বাদুরের মত। গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪০ মাইল (৩৮৬ কি.মি) যেতে পারে। সমতল রাস্তায় এই গাড়িটি ২.৫ সেকেন্ডে স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। গাড়িটি ১৯৯২ সালে আত্মপ্রকাশ পায়। এর রয়েছে সিক্স স্পীড ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ও এর ওজন হল প্রায় ১১০০ কেজি। এর কোম্পানি ১৯৯২ সালে গাড়িটির উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮ সালে ১০৬টি গাড়ি তৈরির মাধ্যমে এর উৎপাদন বন্ধ করে। এর ভি-১২ ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা হল ৬২৭ হর্সপাওয়ার। বর্তমানে এর প্রাথমিক বাজারমূল্য হল ০.৯৮ মিলিয়ন ডলার (৭.৬১ কোটি টাকা)।
৭. কোনিগসেগ সিসিএক্স (Koenigsegg CCX)
এর ডিজাইন পর্শে গাড়ির মত হলেও এর ভিতরের পারফর্মেন্স পর্শের থেকে ভালো। এই গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ প্রায় ২৪৫ মাইল (৩৯৫ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। এর ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ৮০৬ হর্সপাওয়ার ও এটি সুইডেনে নির্মিত। এটি ৬৭৯ পাউন্ড-ফুট টর্কবিশিষ্ট। এটি ৩.২ সেকেন্ডে সমতল রাস্তায় এর স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। গাড়িটিতে আছে সিক্স স্পীড অটো ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন। ১৪৫৬ কেজি ওজনের এই গাড়ির বর্তমান প্রাথমিক বাজারমূল্য হল ০.৫৫ মিলিয়ন ডলার (৪.২৭ কোটি টাকা) ।
৬. সালিন এস–সেভেন টুইন–টার্বো (Saleen S7 Twin-Turbo)
যদি আপনি সেইরকম গতির সাথে দেখতে আকর্ষণীয়, এমন একটি গাড়ি কিনতে চান তাহলে এই গাড়িটিই হবে আপনার জন্য অন্যতম বেস্ট একটি অপশন। এটি রাস্তায় ২.৮ সেকেন্ডে স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় ২৪৮ মাইল (প্রায় ৪০০ কি.মি)। এর শক্তিশালী ইঞ্জিনটির কার্যক্ষমতা ৭৫০ হর্সপাওয়ার। এর যে জিনিসটি সবার আগে মানুষকে আকর্ষণ করে সেটি হল এর বাইরের দিকের মনোরঞ্জক ডিজাইন। ১২৪৭ কেজি ওজনের এই গাড়ির প্রাথমিক বাজারমূল্য ০.৫৫ মিলিয়ন ডলার (৪.২৭ কোটি টাকা)।
৫. ৯এফএফ জিটি–নাইন আর (9ff GT9 R)
“গাড়িটি ৯এফএফ জিটি-নাইন” নামেও পরিচিত। এই গাড়িটি দেখতে অনেকটা হুবহু পর্শে ৯১১ এর মত। আসলে গাড়িটি পর্শে গাড়ির উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ১১২০ হর্সপাওয়ারবিশিষ্ট এই গাড়িটি সমতল রাস্তায় এর স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে ২.৯ সেকেন্ডে। প্রতি ঘণ্টায় গাড়িটি ২৫৭ মাইল (৪১৪ কি.মি) যেতে পারে। এখন পর্যন্ত এই গাড়ি উৎপাদন করা হয় মাত্র ২০টি তাই এই গাড়িটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। ১৩২৬ কেজি ওজনের এই গাড়িটির বর্তমানে প্রাথমিক বাজারমূল্য ০.৭ মিলিয়ন ডলার (৫.৪৩ কোটি টাকা)।
৪. এসএসসি আল্টিমেট এরো (SSC Ultimate Aero)
এই টুইন-টার্বো ইঞ্জিনবিশিষ্ট গাড়িটির ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ১১৮৩ হর্সপাওয়ার। এটি ২.৭ সেকেন্ডে স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। এটি ঘণ্টায় ২৫৮ মাইল (৪১৫ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। এই গাড়িটি পারফরম্যান্স এর হিসেবে অন্যান্য গাড়ির তুলনায় মোটামুটি সাশ্রয়ী মুল্যে পাওয়া যায়। বর্তমানে এর প্রাথমিক বাজারদর ০.৬৫ (৫.০৪ কোটি টাকা) মিলিয়ন ডলার। গাড়িটির ওজন ১২৭০-১২৯২ কেজি পর্যন্ত হয়।
৩. কোনিগসেগ এগেরা আর (Koenigsegg Agera R)
গাড়িটি ২.৯ সেকেন্ডে এর স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। এটি ঘণ্টায় ২৬০ মাইল (৪১৮ কি.মি) পর্যন্ত পৌছাতে পারে। ১০৯৯ হর্সপাওয়ারবিশিষ্ট এই গাড়িটি মোটামুটি সহজেই তুষারের উপর দিয়ে চলতে পারে। ১৪৩৫ কেজি ওজনের এই গাড়িটির বর্তমানে প্রাথমিক বাজারদর ১.৬ মিলিয়ন ডলার (১২.৪০ কোটি টাকা)। খুবই ধনী ও নামী মানুষদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় গাড়ি।
২. হেনেসি ভেনম জিটি (Hennessey Venom GT)
গাড়িটি ঘণ্টায় ২৬৫ মাইল (প্রায় ৪২৬ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। এটি মাত্র ২.৫ সেকেন্ডেই এর স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে। এর টার্বোচার্জড ভি-৮ ইঞ্জিনটি ১২০০ হর্সপাওয়ারবিশিষ্ট। এমনকি একবার টেস্টে দেখা গেছে যে এটি ২৭৫ মাইল(ঘণ্টায়) পর্যন্তও যেতে পারে। সিক্স স্পীড ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনবিশিষ্ট ১২৪৪ কেজি ওজনের এই গাড়িটির বর্তমানে বাজারদর ০.৯৫ মিলিয়ন ডলার (৭.৩৭ কোটি টাকা)।
১. বুগাট্টি ভেয়রন সুপার স্পোর্ট (Bugatti Veyron Super Sport)
বর্তমানে এই গাড়িটিকেই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম গাড়ি বলে মানা হয়। এই গাড়িটি সমতল রাস্তায় মাত্র ২.৪ সেকেন্ডে এর স্পীড ০-৬০(মাইল) এ তুলতে পারে-এ থেকেই বোঝা যায় এর পারফরম্যান্স এর মান কতটুকু। পৃথিবীর দ্রুততম গাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় ২৬৭ মাইল (৪৩০ কি.মি) অতিক্রম করতে পারে। এর ৮ লিটার ডব্লিউ-১৬ ইঞ্জিনটির কার্যক্ষমতা ১২০০ হর্সপাওয়ার। গাড়িটির বর্তমান বাজারমূল্য অন্যান্য গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি। এর প্রাথমিক মুল্য হল ২.৪ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১৯ কোটি টাকা)। উপরের গাড়িগুলোর সাথে তুলনা করলে বুঝতে পারবেন যে, এর মুল্য কতটা বেশি। তবে এর পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে গাড়িটির এই মুল্য আসলে ন্যায্য মূল্য। এই গাড়িটি এর স্পীড আর পারফরম্যান্স এর জন্য অনেক এ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। ১৮৮৮ কেজি ওজনের এই গাড়িটি আসলেই এক বিস্ময়কর আবিষ্কার।