হাঁপানি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার (ঘরোয়া চিকিৎসাসহ)
হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ। হাঁপানি হলো শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ। হাঁপানির ইংরেজী প্রতিশব্দ হল অ্যাজমা যা গ্রীক শব্দ asthma থেকে এসেছে । যার অর্থ হাঁপান বা হাঁ-করে শ্বাস নেয়া। শব্দের অর্থ থেকেই এই রোগের পরিচয় পাওয়া যায়। শ্বাসনালির প্রদাহের ফলে শ্বাসনালি ফুলে যায় এবং অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এতে করে শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির ফলে আক্রান্তের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এতে হাঁপানির বিভিন্ন উপসর্গ, যেমন—কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা বা ধম বন্ধ লাগা এবং শোঁ শোঁ আওয়াজ করা ইত্যাদি লক্ষন পরিলক্ষিত হয় । পরিসংখ্যান মতে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়। সারা বিশ্বে প্রায় ১৫ কোটির অধিক লোক হাঁপানিতে আক্রান্ত।
হাঁপানি রোগের কারন
হাঁপানি যে কারো যে কোন বয়সেই হতে পারে। তবে এটি কোন সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয়। এ রোগের কারন হিসেবে কোন কিছুকে এককভাবে দায়ী করা যায় না । অর্থাৎ হাঁপানি রোগের অন্তর্নিহিত কারন এখনো জানা নেই। তবে লোকে যেগুলোকে হাঁপানির কারন হিসেবে বলে থাকে সেগুলো মূলত হাঁপানি রোগের জন্যে উত্তেজক বা ট্রিগার ফ্যাক্টর। যেমন কারো পুরাতন কাপড়ের গন্ধে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে । তাই বলে কি এটি হাঁপানির কারন ? নাহ, যদি তাই হত তাহলে যে কেউ পুরাতন কাপড়ের গন্ধ নিলেই শ্বাস কষ্টে আক্রান্ত হত তাই না? শ্বাস কষ্টের জন্যে দায়ী ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
এ্যালার্জির কারনে হাঁপানি
এ ধরনের হাঁপানি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের ৬৫% মানুষের এলার্জি জনিত কারনে এজমা/হাঁপানি হয়ে থাকে । এর আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন এলার্জি কি। কোন জিনিসের কারনে যদি কারো অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এটিই হল এলার্জি। সব মানুষ কিন্ত একই ধরনের এলার্জিতে ভুগতে নাও পারে । যেমন, কেউ কেউ বেগুন খেলে শরীর চুলকায়, ফুলে উঠে এটি তার এলার্জি আবার অনেকের কিছু হয় না। যে জিনিসের দ্বারা এই অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাকে বলা হয় এ্যালার্জিক বস্ত বা এ্যালার্জিন।
আমরা সবাই জানি মানুষের শরীরে নানা ক্ষতিকর জিনিস প্রবেশ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় । যখন কোন জিনিসের প্রতি শরীর অতিরিক্ত প্রতিরোধ দেখাতে যায় তখন শরীরে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একে এলার্জির কারন ধরা হয়। তবে কেন কার এলার্জি দেখা দিবে এটি বলা সম্ভব নয়। এলার্জি শরীরের নানা জায়গায় হতে পারে । যেমন চোখের এলার্জি (চোখ লাল হবে, চোখ চুলকাবে এবং চোখ থেকে পানি পড়বে), চামড়ার এলার্জি (চুলকাবে, ফুলে উঠে, র্যাশ উঠে ইত্যাদি), ( হাঁচি শুরু হবে, আঠাল পানির মত সর্দি হতে পারে , নাকের ভিতরটা ফুলে উঠে নাক বন্ধ করেও দিতে পারে)।
একই ভাবে যখন শ্বাসনালী এলার্জি আক্রান্ত হয়, তবে তাকে বলে এ্যালার্জির কারণে এ্যাজমা অথবা এক কথায় এ্যাটোপিক এ্যাজমা। শ্বাস নালীতে এলার্জির ফলে সরু শ্বাস নালীর চারপাশে মাংশপেশি সংকুচিত হয়ে শ্বাসনালী আরো সংকুচিত হয়ে পড়ে, মিউকাস জাতীয় এক ধরনের আঠাল পানি নিঃসৃত হয়ে সরু শ্বসনালীর পথকে বন্ধ করে দিতে পারে, শ্বাসনালীতে মিউকাস অবরণী প্রদাহের কারণে শ্বাসনালীর পথ আরও সংকুচিত করতে ফেলতে পারে।
এই এ্যাজমা সাধারণত অল্প বয়সে শুরুহয় এবং বংশানুক্রমে চলতে থাকে। তবে কারো কারো বয়স বাড়ার সাথে সাথে চলে যায়। এই ধরনের রোগীদের অন্যান্য এ্যালার্জি একসাথে থাকতে পারে, যেমন- একজিমা ইত্যাদি। (চামড়ার এ্যালার্জিকে একজিমা বলে)
এলার্জির কারনে এজমার বেশ কিছু উদ্দিপক রয়েছে যেমন আগাছা ও ফুলের পরাগরেণু, শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত কোন রাসায়নিক পাদার্থ, ঘরের ধুলা বালির উপাদানে থাকা মাইট নামের ক্ষুদ্র কীট; পশুপাখির লোম, পালক, ত্বকীয় তৈলাক্ত পদার্থ; প্রাণীজ পশম ও ত্বক-নিঃসৃত উপাদান ; ছত্রাক, মল্ট, ইস্ট, তেলাপোকা, ও কীটপতঙ্গ এবং পশুপাখির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ , কোন কোন বীজ গুটি, বেশ কিছু খাদ্য, নানা প্রকার ওষধ ইত্যাদি।
ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এ্যাজমা
ব্যায়াম করলে দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় তখন সবারই শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়। হাঁপানি রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস বেশি হওয়ার কারণে শ্বসনালীর ভিতরটা শীতল হয়, যার ফলে হাঁপানি শুরু হয়ে যায়। অনেকে শ্বাস কষ্ট হবে এই ভয়ে খেলা ধুলা করে না । তবে আমাদের জানা উচিত হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করে ব্যায়াম করা যায়।
আবহাওয়ার জনিত কারণে এ্যাজমা
শীতকালে হাঁপানি রোগীর কষ্ট বেশি হয় । সাধারনত সব হাঁপানি রোগী ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। ঠান্ডা আবহাওয়ায় গেলেই তাদের শ্বাস কষ্ট শুরু হয়। ঠান্ডা বাতাসে আদ্রতা তথা পানির পরিমান কম থাকায় শ্বাসনালীকে সংকুচিত করে। শীতকালে ভাইরাসজনীত রোগগুলো বেশি হয়। এছাড়া আবহাওয়াতে গাড়ীর ধোঁয়া, কুয়াশা, সিগারেটের ধোঁয়া, কল-কারকানার ধোয়া, শিল্পে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য ও এর বর্জ্য, বিভিন্ন দ্রাবক, গৃহস্থালি সামগ্রী, প্রসাধনী ও বিভিন্ন স্প্রে এবং সাধারণ ধূলাবালি থাকলেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
মানসিক চাপের কারণে এ্যাজমা
অনেক অসুখ আছে যেগুলো মানসিক চাপ বাড়লে দেখা দেয়, এর মধ্যে এ্যাজমা একটা। মানসিক চাপে আবেগ-যেমন: উত্তেজনা, ভয়, রাগ থাকলে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এই দুশ্চিন্তা থেকেও শ্বাসকষ্ট হয়। আবেগ স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী এজমা প্রভাবিত করে বলে জানা যায় । অপ্রত্যাশিত এজমা রোগীর জন্য আতঙ্কজনক।
ভাইরাস সংক্রামণ জনিত এ্যাজমা
ভাইরাসের কারনে এ্যাজমা সাধারণতঃ ২ বৎসরের নীচে শিশুদের বা ৪০ বৎসরের পরে বয়স্কদের ক্ষেত্রে অধিক পরিলক্ষিত হয়। দুই বৎসরের নীচের শিশুর হাঁপানি আক্রামণের একমাত্র কারণ ভাইরাস জ্বর। বয়স্কদেরও একটা প্রধান কারণ ভাইরাস সংক্রমণ জনিত হাঁপানি।
তবে সাধারনত এ ধরনের রোগীদের বংশগতভাবে এ্যালার্জি দেখা যায়। ভাইরাস সংক্রমনের ফলে সব হাঁপানি রোগীই কমবেশি সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্টে অক্রান্ত হয়।
পেশাগত কারণে এ্যাজমা
পেশাগত কারণে অনেক সময় হাঁপানি হতে দেখা যেতে পারে । পেশাগত কারণে হাঁপানি তখনই বলা যায় যখন কোন মানুষের পেশাতে যোগ দেওয়ার পূর্বে হাঁপানি থাকে না অথচ কোন বিশেষ পেশায় যোগ দেবার কিছুুদিন পর থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয় । তবে এ সমস্ত রোগী তাদের ছুটির দিনে ভাল থাকে। কর্মস্তলে গেলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আমাদের দেশের সার কারখানা, ঔষধ কারখানা, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনকারী সংস্থা, প্লাষ্টিক কারখানা, গাড়ী স্প্রে রং এর কাজ করে যারা, বেকারীর , ধান, আটা, পাট বা স্ মিলে যারা কাজ করে তাদের ভিতর পেশাগত কারণে হঁপানি দেখা যেতে পারে ।
বিভিন্ন গন্ধ জনিত হাঁপানি
বিভিন্ন সুগন্ধি, স্প্রে, মশার কয়েল কিংবা নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ও কীটনাশকের গন্ধ থেকেও কারো কারো শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ঔষধের কারণে এ্যাজমা
এ্যড্রিনার্জক স্নায়ু শ্বসনালীকে প্রসারিত করে। বিটাব্লকার বিশেষতঃ প্রপ্রানল জাতীয় ঔষধ এ্যাড্রিনার্জিক স্নায়ুর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই এই জাতীয় ঔষধ খেলে এ্যজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় । এছাড়া মারফিন জাতীয় ঔষধ সেবনেও শ্বাস কষ্ট বাড়ে। কোন কোন এ্যাজমা রোগীর দেখা যায় এ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খেলে এ্যাজমা বাড়ে।
হাঁপানি রোগের লক্ষণ
সাধারণ লক্ষণ সমুহ নিম্নরূপঃ শ্বাসকষ্ট, শ্বাসটান, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি (কফ ও কফহীন)।
শ্বাসকষ্ট
যখন আমরা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেই তখন সেটি আমাদের বোধ বা অনুভবে আসে না। কিন্ত যখন শ্বাস গ্রহণ ও প্রশ্বাস ফেলার সময় শ্রমের প্রয়োজন পড়ে তখন সেটিকে শ্বাস কষ্ট বলে। শ্বাসকষ্ট মাত্রা জীবনাচরণে জানা যায়- কি পরিমান কাজে, কতটুকু পরিশ্রমে, বা সিঁড়ির কত ধাপ অতিক্রমে, কতটুকু হাঁটার পর শ্বাসকষ্ট হয়। শুয়ে থাকা অবস্থায় শ্বাসকষ্টকে orthopnea বলে।
বুকে আওয়াজ (wheeze)
শ্বাস-প্রশ্বাস কালীন বুকে ঘড়ঘড় আওয়াজ, শোঁ শোঁ বা বাঁশির শব্দ, যা স্টেথোস্কোপ বা আশেপাশের অবস্থান করা লোক বাহির থেকে শুনতে পায়। শ্বাসফেলার সময় এলভিওলাই থেকে বায়ু বহির্গমন জনিত কারনে শব্দ তৈরি হয়।
বুকে চাপ অনুভব
বুকে চাপ বলতে মনে হবে যে বুক ভার হয়ে আছে বা বুকের উপর কিছু বসে আছে।
দম বন্ধ অনুভব
এই অবস্থায় রোগীর কাছে মনে হয় ঘরে বাতাস নাই, শ্বাস নিতে পারছে না অর্থাৎ দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কাশি (cough)
এটি হাঁপানির সবচেয়ে পরিচিত উপসর্গ। শ্বাস তন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে ভিন্ন ধরণের কাশি হয়। এজমাতে হঠাৎ রাতে খুসখুসে কাসি হয়। স্বল্প পরিশ্রম ও জোরে শ্বাস নিতে কাশি হতে পারে। খুসখুসে কাশ বা কফ সহ কাশ। এজমাজনিত কাশি সচরাচর শেষরাত্রে বা ভোর-সকালে বৃদ্ধি পায়। ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ঘুম ভেঙ্গে যায়।
হাঁপানি রোগ নির্ণয়
হাঁপানি রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হচ্ছে রোগীর মুখে রোগের বিস্তারিত ইতিহাস জেনে নেওয়া । হাঁপানির প্রধান উপসর্গগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, শ্বাসটান, বুকে চাপ অনুভব করা, দম বন্ধ অনুভুতি বা অল্পতেই দম ফুরিয়ে যাওয়া, কাশি (কফ ও কফহীন) বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া।
সাধারণত উপরে বর্ণিত উপসর্গগুলোশেষ রাতে বা খুব সকালে বেশি হয় এবং শ্বাসনালিতে কোনো ধরনের অ্যালজেন প্রবাহ প্রবেশ করলে বা অল্প মাত্রায় পরিবর্তিত হলে এ উপসর্গগুলোর তীব্রতা বেড়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে কাশি বা শ্বাসকষ্ট শুরুর আগে নাক চুলকায়, হাঁচি হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায়। এসব উপসর্গগুলোর সাথে যখন বংশে করো হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় তার হাঁপানি রয়েছে।
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ
এলার্জি জনিত দ্রব্য দূরে রাখা
হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের জন্যে প্রথমেই যেসব জিনিস থেকে হাঁপানির আক্রমণ শুরু হয় সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। এলার্জি জনিত হাঁপানির ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ । এজন্য প্রয়োজনে হাঁপানি রোগীদের এলার্জি পরীক্ষা করে জানা দরকার তার কোন কোন দ্রব্য থেকে এলার্জি শুরু হয়।
পশু-পাখি পশম সরিয়ে রাখা
হাঁপানি রোগে আক্রান্ত অনেকেরই পশুপাখির লোমে এলার্জি থাকে। এই সব প্রাণী বাড়ীর বাইরেই রাখা রাখা উচিত।
বিছানা করুন প্লেন লিনেন দিয়ে। প্রতিদিন দু বেলা ঘরের মেঝে পরিষ্কার করা দরকার।হাঁপানির রোগীর বিছানার চাঁদার প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে অথবা প্রতিদিন রোগে শুকাতে হবে। যেসব জিনিস থেকে ধুলো ওড়ে সেগুলো নাড়াচাড়া করবেন না। এসব ঝাড়ার সময় হাঁপানির রোগীকে ঘরের বাইরে থাকতে হবে।
রান্নার কিংবা অন্য কোন গন্ধ
রান্না করার সময় অনেক ঝাঁঝালো ধোঁয়া উঠে উগ্র ভাব ছাড়ালেও ঘরের জানালা অল্প সময়ের জন্যে খুলে দিন। এতে ধোঁয়ার রেশ অল্প সময়ে চলে যাবে। কাঠ বা কেরোসনে রান্না করলে ধোঁয়া বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটা জানালা অল্প খুলে রাখতে পারেন। এ ছাড়াও অন্য কোন ঝাজালা গন্ধ যেমন মশলা ভাজার গন্ধ, মশা মারার স্প্রে, পারফিউম যেন নাকে প্রবেশ না করে।
রাস্তায় সাবধানে চলাফেরা করা
হাঁপানি রোগীর ধুলো, ধোঁয়া, ঠান্ডা বা কুয়াশা লাগানো চলবে না। রাস্তার ধুলো, ঘরের পুরাতন ধুলো, গাড়ীর ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাবার জন্য ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করুন এতে অনেকাংশে শ্বাস কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার যারা বাইক অথবা নন এসি গাড়িতে চলাচল করেন তারা অবশ্যই মাস্ক পরে নিবেন।
ধূমপান বারণ
ফুসফুস ও শ্বাসনালী সংক্রান্ত নানা রোগের অন্যতম কারণ হল ধূমপান।সিগারেটের ধোঁয়া থেকে প্রথমে ব্রঙ্কাইটিস, পরে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস সৃস্টি করে সিগারেটের ধোঁয়া হাঁপানি রোগীর কষ্ট সাংঘাতিক ভাবে বাড়িয়ে দেয়। তাই হাঁপানি রোগীর সামনে ধুমপান করা উচিত নয়।
শোবার ঘর বদল করা
ধুলা-বালিতে যেহেতু হাঁপানি রোগীর সমস্যা হয় তাই ঘর থেকে কার্পেট বের করে নিন। এগুলোতে প্রচুর ধুলা বালি জমে। নরম চেয়ার, কুশন ও বাড়তি বালিশও বের করে দিন।
পরিষ্কার বাতাসের জন্য জানালা খোলা রাখুন। যখন ভ্যাপসা ও দমবন্ধ লাগে তখন জানালাগুলো খুলে দিন। আবার যখন বাইরে গাড়ির ধোঁয়া, ফ্যাক্টরির দূষণ ধুলো বা ফুল ও গাছের রেনু বেশি থাকে, তখন জানালা বন্ধ রাখুন। তাহলে আকস্মিক শ্বাস কষ্ট থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাবেন।
ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন নিয়ম করে হালকা ব্যায়াম করা খুব জরুরি। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে যে, বেশি ব্যায়ামের জন্য যেন হাঁপানির টান না ওঠে।
পানি
হাঁপানি চিকিত্সা চলাকালীন রোগীকে প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে দিন। কারণ শরীরে পানির ঘাটতি থাকলে হাঁপানির ওষুধ কাজ করে না । তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখা ভাল একদম ঠান্ডা পানি হাঁপানি রোগীকে খেতে দেওয়া উচিত না।
খাওয়া-দাওয়া
বেশি রাতে ভরপেটে খেলে হাঁপানির টান উঠতে পারে তাই রাত্রিতে পেট ভরে খাবেন না। ফ্রিজ থেকে বের করে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা জিনিস খাওয়া একদমই উচিত নয়। রুম টেম্পারেচারে এলে তবেই খাবেন, ঠান্ডা কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ফ্রিজের পানি প্রচন্ড গরমেও খাওয়া উচিত নয়।
চিন্তা মুক্ত থাকুন
মানসিক চাপে আবেগ-যেমন: উত্তেজনা, ভয়, রাগ থাকলে হাঁপানির তীব্রতা বেড়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হবে এই দুশ্চিন্তা থেকেও শ্বাসকষ্ট হয়। তাই চিন্তা মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
হাঁপানি রোগীর খাওয়া দাওয়া
অনেক খাবারের এলার্জির কারণে হাঁপানির তীব্রতা বাড়তে পারে। তাই হাঁপানি রোগীদের খাবার দাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবল্বন করা উচিত। আসুন জেনে নেয়া যান হাঁপানি রোগীদের কি খাওয়া উচিত এবং কি খাওয়া অনুচিত।
যে খাবার খাওয়া উচিত
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হাঁপানির প্রকোপ কমাতে সাহায্য করে। তাই ফ্যাটি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। সামুদ্রিক বিভিন্ন রকমের মাছ যেমন স্যামন, টুনাতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে। এছাড়াও কিছু উদ্ভিদেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যেগুলো খেলে হাঁপানির প্রকোপ কমে।
শাক-সবজি
সবজিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও প্রচুর ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হাঁপানির ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। প্রতিদিন খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি রাখুন।
ফল
ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা হাঁপানির তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফল রাখা উচিত এর ফলে হাঁপানির ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলের মধ্যে আপেল, কমলা, কলা ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলগুলো হাঁপানির ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
যে খাবার গুলো খাওয়া উচিত নয়
হাঁপানির প্রকোপ থেকে বাঁচতে বেশ কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে
ট্রান্স ফ্যাট ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার
ট্রান্স ফ্যাট ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড হাঁপানির প্রকোপ বাড়ায় এবং হার্টের বিভিন্ন জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে বলে জানা যায় । মার্জারিন এবং আরো কিছু প্রক্রিয়াজাত খাবারে ট্রান্স ফ্যাট ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড পাওয়া গেছে। তাই এই ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
অধিক ক্যালোরিযুক্ত খাবার
প্রতিদিন আমাদের শরীরের যে পরিমান ক্যালোরি গ্রহণ করা হয় তা যদি খরচ না হয় তাহলে শরীরতে মেদ জমে। স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় অধিক ওজনের ব্যক্তিদের হাঁপানির ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন আমাদের শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অধিক ক্যালরী গ্রহণ করা উচিত নয়।
অ্যালার্জিযুক্ত খাবার
অনেক মানুষের বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি আছে। ডিম, চীনা বাদাম, চিংড়ি মাছ, মিষ্টি কুমড়া, গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বেগুন,কাজু বাদাম, চকোলেট, সরিষা, মধু, গুড়, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার ইত্যাদি অ্যালার্জি থাকে কারো কারো। যার যেই খাবারে অ্যালার্জি থাকে তার সেটা এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ হাঁপানি রোগির জন্য অ্যালার্জিযুক্ত খাবার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার
খাবারকে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে বিভিন্ন রকমের প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয়। প্রিজারভেটিভ হিসেবে বেশিরভাগ খাবারেই সালফাইট ব্যবহৃত হয়।সালফাইট হাঁপানি রোগির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সালফাইট থেকে সালফাইট ডাই অক্সাইড সৃষ্টি হয় যা ফুসফুসে চুলকানীর উদ্রেক করে । বিভিন্ন টিনজাত খাবার, কৃত্রিম ভাবে শুকানো ফল ও ওয়াইনে প্রচুর পরিমাণে সালফাইট থাকে যা হাঁপানির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। তাই এই ধরনের খাবারগুলো হাঁপানি রোগীর এড়িয়ে চলা উচিত।
হাঁপানির চিকিৎসা
হাঁপানি রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
অ্যাজমা বা হাঁপানি হচ্ছে ফুসফুসের একটি রোগ যার কারনে শ্বাসক্রিয়ায় সমস্যা হয়। এটি সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে একটি খুব তীব্র হয় আর অন্যটি হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী যার ফলে ফুসফুসে বায়ু চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
অ্যালার্জি, মানষিক চিন্তা, বায়ু দূষণ, ঠাণ্ডা বাতাস, শ্বসন তন্ত্রের সংক্রমণ, ধুলাবালি , বংশগত কারন, প্রিজারভেটিভযুক্ত সংরক্ষিত খাদ্য ও অন্য কোন অসুখের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে হাঁপানির প্রকোপ হতে পারে।
সাধারণত শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ ও দম বন্ধ অনুভুতি, কাশি, কফ তৈরি হাঁপানির সাধারণ লক্ষণ । হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলার ও অন্যান্য ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে যা বেশ দামী ও দীর্ঘদিন ব্যাবহার করতে হয়। আপনি চাইলে কিছু প্রাকৃতিক উপায় আছে যার মাধ্যমে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক উপায়গুলো
আদা : আদা হাঁপানি সহ নানা রোগের জন্য অতিপরিচিত একটি প্রাকৃতিক চিকিৎসা । গবেষকদের মতে, আদা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে এবং শ্বাসনালী সংকোচন রোধে সাহায্য করে। এক কাপ ফুটন্ত পানির মধ্যে মেথি, আদার রস ও মধু দিয়ে অল্প কিছুক্ষণ জ্বাল দিতে দিন । রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় এই মিশ্রণটি ১-২ চামচ করে পান করলে হাঁপানির প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার, সমপরিমাণ আদার রস, বেদানার রস এবং মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ থেকে ১ টেবিল চামচ করে দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন। এছাড়া সাধারন কাশি সহ হাঁপানিতে আপনি কাঁচা আদা লবণ দিয়ে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাবেন। একবার আমি কাশি নিয়ে টানা দুই দিন বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছিল । একমাত্র আমাকে আদা উপশম দিয়েছিল। আদা ছাড়া ব্যাপারটি একবারে অসম্ভব ছিল। অন্তত আমার কাছে এটি কাশির জন্যে পরিক্ষিত একটি প্রাকৃতিক উপশম।
আদায় উপাদান ব্রনকাডিয়েটিং রয়েছে হাঁপানি রোগীদের স্বাভাবিক শ্বাস নিতে সহায়তা করে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকদের এক সমীক্ষায় বলা হয়, ব্রনকাডিয়েটিং মেডিটেশনের বিটা অ্যাগোনিস্ট একটি সাধারণ হাঁপানির ওষুধ। যা ধীরে ধীরে শরীরে কাজ করে এয়ারওয়ে স্মুথ মাসল টিস্যুকে স্বাভাবিক রেখে শ্বাস নিতে দেহকে সাহায্য করে। একজন শ্বাস কষ্টের রোগী আদা খেয়ে কীভাবে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে এই গবেষণায় সেটাই দেখা হয়েছে।
কফি/চা : কফি হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে । কফির ক্যাফেইন রাসায়নিক ভাবে থিওফিলিন এর মত, যা অ্যাজমার একটি ভালো ঔষধ এবং এটি বায়ু চলাচলের পথকে পরিস্কার করে । তবে দিনে কারো তিন কাপের বেশি ব্ল্যাক কফি খাওয়া উচিত না। আর যদি কেউ কফি পছন্দ না করেন তাহলে রঙ চা খেতে পারেন।
সরিষার তেল: যখন হাঁপানির তীব্রতা দেখা দেয় তখন কিছুটা সরিষার তেল কুসুম গরম করে বুকে এবং পিঠে মালিশ করলে শ্বাস প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয় । তখন রোগী স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে। ঘরে কর্পুর থাকলে সরিষার তেলের সাথে অল্প পরিমাণ কর্পুর মিশিয়ে দিতে পারেন। ঘরোয়া উপায়ে হাঁপানি প্রতিকারের এটি খুবই কার্যকরি পদ্ধতি।
ডুমুর : গ্রামে ডুমুর একটি পরিচিত ফল। ডুমুর ফল কফ এবং শ্বাসকষ্ট উপশমে সাহায্য করে। তিনটি শুকনো ডুমুর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে একটি পাত্রে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন । সকালে খালি পেটে ডুমুর ভিজানো সেই পানি এবং ডুমুর খেয়ে নিন । তবে এ পদ্ধতিটি দীর্ঘ মেয়াদী।
হলুদঃ হলুদে প্রদাহ রোধী উপাদান আছে বলে প্রমাণিত। প্রাথমিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, হলুদের গুঁড়া হাঁপানি উপশম করতে পারে। ১ কাপ দুধে এক চামচ হলুদ মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। আস্তে আস্তে হাঁপানির প্রকোপ কমে আসবে।
ইউক্যালিপটাস তেল: বিশুদ্ধ ইউক্যালিপটাস তেল হাঁপানির চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। এই তেলে রয়েছে জমাট বাধা দূর করার গুনাগুন। ইউক্যালিপটাস তেলে থাকা ইউক্যালিপটল নামক রাসায়নিক পদার্থ মিউকাস ভাঙতে সাহায্য করে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। যদিও এই তেলটি আমাদের দেশে সহ্জলভ্য নয় তবে অনলাইনে নানা ইকমার্স সাইটে পাওয়া যায়। চাইলেই কিনে নিতে পারেন। সামান্য কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল পেপার টাওয়েল বা রুমালে নিয়ে ঘুমানোর সময় মাথার পাশে রাখুন । এত তেলের গন্ধটা নিঃশ্বাসের সাথে প্রবেশ করে হাঁপানির তীব্রতা কমায়। এছাড়া কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল গরম পানিতে দিয়ে সেটার বাষ্পের মাঝে গভীর নিঃশ্বাস নিন। দ্রুত হাঁপানির প্রকোপ থেকে উপশম পাবেন।
লেবু: অনেক হাঁপানির রোগীদের দেহে ভিটামিন সি এর মাত্রা কম থাকে। লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হাঁপানির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে অর্ধেকটা লেবু রস নিয়ে স্বাদ অনুযায়ী কিছুটা চিনি দিয়ে নিয়মিত খেলে এটি হাঁপানির আক্রমণ কমাতে সাহায্য করে ।
রসুন : রসুন হাঁপানি প্রতিরোধে প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। হাঁপানির একটি বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে রসুন ব্যবহার করা যেতে পারে। পৌনে এক কাপ পানিতে বড় ২-৩ কোয়া রসুন ফুটিয়ে নিয়ে কক্ষ তাপমাত্রায় এলে সেটা পান করুন।
মধু: মধু হল হাঁপানির একটি সবচেয়ে পুরনো নিরাময়কারী উপাদান। মধুতে থাকা অ্যালকোহল এবং ইথারিয়েল তেল হাঁপানির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। অনেকে মধুর গন্ধ শুকেই ফলাফল পান। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১চা চামচ মধু মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন । দিনে এটি তিন বার পান করবেন। আবার রাতে ঘুমাতে যাবার আগে ১ চা চামচ মধুর সাথে আধা চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন । এটি গলার কফ দূর করে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ে কিছু সাধারন জিজ্ঞাসা
অ্যাজমা কি ছোঁয়াচে রোগ ?
না, অ্যাজমা ছোঁয়াচে রোগ নয়। তবে বংশগতভাবে অর্থাৎ বংশে কারও অ্যাজমা থাকলে বংশধরদের মধ্যে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
অ্যাজমা কি পুরুপুরি নিরাময়যোগ্য ?
না, অ্যাজমা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় যোগ্য নয়। তবে ঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করলে একজন অ্যাজমা রোগী প্রায় সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।
বুকের দুধ খেলে শিশুর অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা?
না, আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ খেলে শিশুর অ্যাজমা হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই আবার মায়ের সংস্পর্শেও অ্যাজমা হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই।
ইনহেলার ব্যবহার কখন করা উচিত ?
ইনহেলার দিয়েই প্রথমে হাঁপানির চিকিৎসা সেবা শুরু হয়। ইনহেলার দেওয়ার দু-তিন মিনিটের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট আর থাকে না। অনেকের ধারনা সর্বশেষ ওষুধ হিসেবে ইনহেলার ব্যবহার করা উচিত অর্থাৎ ঔষধ সেবনের ব্যর্থ হলে অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলার ব্যবহার করা উচিত কিন্তু এটি মোটেও ঠিক নয়।
শ্বাসকষ্ট মানেই কি অ্যাজমা?
না, শ্বাসকষ্ট মানেই কিন্তু অ্যাজমা নয়। অ্যাজমা ছাড়াও আরওঅনেক কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যেমন- হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যাদের রক্তশূন্যতা আছে বা কিডনি রোগের ক্ষেত্রেও শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা কোন হেলা ফেলা করার মত রোগ নয়। রোগের সমস্যা যদি প্রকট হয় এবং এসব উপায়ে কোনো উপশম না হয় তাহলে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।