সাধারণ সৈনিক থেকে পুরো বিশ্ব কাপিয়ে দেওয়া একজন হিটলার
অ্যাডলফ হিটলার আর ওসামা বিন লাদেনের মধ্যে একটা মিল আছে। দুজনেই অফিশিয়ালি মৃত ঘোষিত হয়েছিলেন মে মাসের এক তারিখে। এডলফ হিটলার কে চিনেন না, আশা করি এমন কোন লোক নেই। অনেকের চোখে তিনি হিরো,আবার অনেকের চোখে তিনি ভিলেন।
যাই হোক না কেন পৃথিবীর ইতিহাসে তার চেয়ে ঘৃনিত কোন ব্যাক্তির জন্ম হয়নি কখনো। এক সময় চেঙ্গিস খানকে ধরা হয় নৃশংসতার গুরু। আর সেই চেঙ্গিস খান নৃশংসতায় তার কাছে হার মেনেছিলো। তার সৃষ্টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নির্মমতায় রক্তে ভেসে গিয়েছিলো পৃথিবীর অর্ধেক জনপদ। হত্যা করেছিলেন পৃথিবীর প্রায় সব ইহুদীকে।
এডলফ হিটলারকে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম রাজনৈতিক নেতা ও ঘৃণ্যতম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদি তার জন্ম অস্ট্রিয়াতে তারপরও জার্মানের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার উত্থান ঘটে । একটি বিশেষ গোষ্ঠী ও মতাদর্শের নেতা ছিলেন তিনি, পরবর্তীতে এই মতাদর্শই ‘নাৎসি আন্দোলন’ হিসেবে রূপ লাভ করে।
নেতা হিসেবে ঘৃণিত হলেও হিটলার বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে ছিলেন অসাধারন । তিনি একজন চমৎকার বক্তা হিসেবে পরিচিত। যদি কখনো কাউকে কিছু বুঝিয়ে কিছু বুঝানোর প্রয়োজন হত তাহলে খুব চমৎকারভাবে বুঝিয়ে তাক সেই ধারণায় প্রভাবিত করে ফেলতে পারতেন ।
একটা সময় ছিল যখন ‘হিটলার’ নামটিতে কোনো নেতিবাচকতা ছিল না। কিন্তু নাৎসি নেতা হিটলার তার জীবনে এত পরিমাণ ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ করেছেন যে পরবর্তীতে ‘হিটলার’ শব্দটিই ঘৃণ্য ও নেতিবাচক হিসেবে রূপ লাভ করেছে।
তবে হিটলারও আর দশজনটা মানুষের মতই ছিলেন। তারও ছেলেবেলা আছে। তারও একগুচ্ছ ইতিহাস আছে। হিটলারের ‘হিটলার’ হয়ে উঠার আগের ইতিহাস, আর পরের ইতিহাসও আছে।আছে পারিবারিক ইতিহাস, আছে বংশগত ইতিহাস। হিটলারের বংশ সম্বন্ধে খুব বেশি জানা যায় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক হিটলার সম্পর্কে কিছ তথ্য।
তার কৃতকর্মের জন্য তার বংশধরদের ওপর চেপে আছে এক ভয়ানক কলংক। তবে এতসব ছাপিয়েও হিটলারের পরিবারে এমন কিছু ব্যাপার আছে যা মোটামুটি বিস্ময়কর। সেরকমই কিছু তথ্য তুলে ধরছি এখানে।
হিটলারের ব্যক্তিগত জীবন
হিটলারের জন্ম ১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল অস্ট্রিয়া ব্যাভেরিয়ার মাঝামাঝি ব্রনাউ নামে এক আধা গ্রামে। তাের হিটলার ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর তৃতীয় সন্তান। হিটলারের বাবা Alois এর আসল বাবা কে তা কখনোই জানা যাইনি। তাই বৈধভাবে Alois এর কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছিল না। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে মায়ের নাম Schicklgruber ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭৬ সালেই Alois প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। তার ছেলে অ্যাডলফও কখনও হিটলার ছাড়া অন্য কোন শেষ নাম ব্যবহার করেনি। হিটলারের বাবা সরকারী কাস্টমসে সামান্য চাকরি করত। যা আয় করত তা দিয়ে তিন বউ আর তাদের ছেলেমেয়েদের দুই বেলা খাবার সংকুলানই হতো না।
হিটলারের মা বাবা
এডলফের বাবা-মায়ের মোট ছয়টি সন্তান ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এডলফ ও তার বোন পলা-ই পূর্ণবয়স্ক হতে পেরেছেন। বাকি চার জন শিশুকালেই মারা যায়। এডলফের জন্মের আগে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গুস্তাভ এবং আইডা মৃত্যুবরণ করে। হাইড্রোসেফালাসে আক্রান্ত হয়ে তার আরেকটি ভাই অট্টো মৃত্যুবরণ করেন। ৬ বছর বয়সে এডমন্ড নামে আরেকটি ভাই মৃত্যুবরণ করে ১৯০০ সালে। ঐ সময়ে শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল। কিন্তু তার পরেও এক দম্পতির চার চারটি সন্তান মারা যাওয়া বিরলই ছিল সে সময়ে।
হিটলারের বোন পাউলার সাথে (starschanges.com)
চার বছরের ছেলেটা পানিতে পড়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন এক ক্যাথলিক ধর্মযাজক। সাদা পোশাক পরা মানুষটার দারুণ ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছিল ছোট্ট ছেলেটা, আর কৃতজ্ঞতাবশত ঠিক করেছিল বড় হলে সেও এমন ধর্মযাজক হবে। ঘটনাটি তার মনকে আলোড়িত করে। মনের কৃতজ্ঞতা আর ভালোলাগা থেকেই তিনি বড় হয়ে ধর্মযাজক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বড় হয়ে একটা পর্যায়ে নিজেই ঈশ্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন বলে মনে করেন অনেকে।
ছয় বছর বয়সে স্থানীয় একটি অবৈতনিক স্কুলে ভর্তি হলেন। ছেলেবেলা থেকেই হিটলার ছিলেন একগুঁয়ে, জেদি আর রগচটা। কারনে অকারনে সামান্য ব্যাপারেই রেগে উঠতেন। অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে তর্ক করতেন। পড়াশোনাতে যে তার মেধা ছিল না এমন নয়। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে তাকে বেশি আকৃষ্ট করত ছবি আঁকা। যখনই সময় পেতেন কাগজ পেন্সিল নিয়ে ছবি আঁকতেন।
বয়স যখন এগারো তখন ঠিক করলেন আর একাডেমিক নয় পুরুপুরি ছবি আঁকাতে লিপ্ত হবে। বাবার ইচ্ছা ছিল স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে কোনো কাজকর্ম জুটিয়ে নেবে। বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্কুল ছেড়ে দিলেন হিটলার। স্থানীয় এক আর্ট স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করলেন।
কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না। একটা বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হলেন। কিন্তু কয়েক মাস যেতে না যেতেই অর্থের অভাবে স্কুল ছেড়ে দিতে হল। হিটলারের বাবা ১৯০৩ সালে মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া পেনশন ও সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে তার মাও মারা যান ফলে হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। মা মারা গেলে সংসারের সব বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়।
এবার ভাগ্য অন্বেষণে বেরিয়ে পড়লেন হিটলার। ভাগ্যের সন্ধানে ভিয়েনাতে চলে এলেন। ভিয়েনাতে এসে তিনি প্রথমে মজুরের কাজ করতেন। কখনো মাল বইতেন। এরপর রং বিক্রি করতে আরম্ভ করলেন। পড়াশোনায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে আবার লিন্ৎসে ফিরে আসেন। শিল্পী হিসেবেই তার বেশ সম্ভাবনা ছিল। এ
এ উদ্দেশ্যে তিনি দুইবার “Academy of fine arts Viyena” তে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন ১৯০৭ ও ১৯০৮ সালে এবং দ্বিতীয়বার তিনি খুবই কঠোর ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন যে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণেরই অনুমতি পাননি। কিন্তু এখনো শিল্প বোদ্ধারা মনে করেন যে, হিটলার ছিলেন একজন গুণী শিল্পী। তিনি একশো এর অধিক চিত্রকর্ম ও পোস্টকার্ড তৈরি করেছিলেন। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে না পেরে তাই হিটলার আবার ভিয়েনায় চলে যান।
ভিয়েনাতে থাকার সময়েই তার মনের মধ্যে প্রথম জেগে ওঠে ইহুদি বিদ্বেষ। তখন জার্মানির অধিকাংশ কলকারখানা, সংবাদপত্রের মালিক ছিল ইহুদিরা।তবে তার মনে কেন ইহুদি বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। দেশের অর্থনীতির অনেকখানিই তারা নিয়ন্ত্রণ করত। হিটলার কিছুতেই মানতে পারছিলেন না, জার্মান দেশে বসে ইহুদিরা জার্মানদের উপরে প্রভুত্ব করবে।
হিটলারের জার্মান আগমন ও উত্থান
১৯১২ সালে তিনি ভিয়েনা ছেড়ে এলেন জার্মানির মিউনিখে। দুঃখ-কষ্ট আর বেঁচে থাকার সংগ্রামে ভবগুরের মত আরো দুই বছর কেটে গেল। ১৯১৪ সালে শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। হিটলার সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগ দিলেন। ১৬তম বাভারিয়ান রিজার্ভ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিল হিটলার। যুদ্ধের পুরোটা সময় জার্মানিকে পক্ষে কাজ করে গেছেন।
১৯১৬ সালের অক্টোবরে আহত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের বাকিটা সময় সক্রিয় থেকেছেন। অধিকাংশ সময়ই সম্মুখ সারিতে থেকে হেডকোয়ার্টার্স রানার হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড ক্লাস আয়রন ক্রস লাভ করেন। ১৯১৮ সালের আগস্টে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেয়া হয়। একজন করপোরালের পক্ষে এটা বেশ বড় প্রাপ্তি। এই যুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের পরিচয় দেখালেও তার কোনো পদোন্নতি হয়নি।
১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল। জার্মান জুড়ে দেখা দিল হাহাকার আর বিশৃঙ্খলা। এর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠল নানা বিপ্লবী দল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করার জন্য হিটলারকে নিয়োগ করলেন কর্তৃপক্ষ। সেই সময় প্রধান রাজনৈতিক দল ছিল লেবার পার্টি। তিনি সেই পার্টির সদস্য হলেন। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেই পার্টিতে হিটলার নিজের অস্থান দৃঢ় করে নিলেন । এক বছরের মধ্যেই তিনি হলেন পার্টিপ্রধান। নেতা হয়েই তিনি দলের নতুন নাম রাখেন ‘ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স পার্টি’। পরবর্তীকালে এই দলকেই বলা হতো ‘নাৎসি । হিটলার নাৎসি দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং দলীয় প্রধান তথা ফ্যুয়েরার হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।
১৯২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম নাৎসি দলের সভা ডাকা হল । এ সভায় হিটলার প্রকাশ করলেন তার পঁচিশ দফা দাবি। এরপর হিটলার প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা চিহ্নযুক্ত দলের পতাকা। ক্রমশই নাৎসি দলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তিন বছরের মধ্যেই দলের সদস্য হলো প্রায় ৫৬০০০ এবং এটি জার্মান রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করল।
এ সময় হিটলার একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠন করে। এই বাহিনী গঠিত হয় মূলত প্রাক্তন আধা সামরিক কর্মচারী ও বেকার যুবকদের নিয়ে। তখন এ বাহিনী AS নামে পরিচিত হয়। শীঘ্রই এই বাহিনীর সহায়তায় জার্মানির রাজনৈতিক সমাজে হিটলার বেশ প্রভবশালী হয়ে ওঠেন ।
হিটলার চেয়েছিলেন মিউনিখে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব যেন না থাকে। এ উদ্দেশ্যে তারা ১৯২৪ সালে জার্মান সেনাধ্যক্ষ লুন্ডেনডর্ফ ও অন্যকয়েকজন সহযোগীর সহায়তায় বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের জন্যে একটি অভ্যুত্থান করে । একটি ক্ষুদ্র আন্দোলন ও কয়েকজনের মৃত্যর পর ‘বিয়ার হল অভ্যুত্থান’ নামে পরিচিত সেনা অভ্যুত্থান টি ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়।রাষ্ট্রীয় বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে হিটলারকে গ্রেফতার ও সাজা হিসেবে ৯ মাসের কারদণ্ড দেওয়া হয়।
তাকে এক বছরের জন্য ল্যান্ডসবার্গের পুরনো দুর্গে বন্দি করে রাখা হলো। কারাগারে বসে হিটলার Mein Kampf নামে একটি আত্মজীবনী লেখেন । বইটিতে হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, ইহুদী বিদ্বেষ, শ্রেষ্ঠ জাতিস্বত্ত্বার বিষয় সমূহ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ ও জার্মানির পূর্বাংশ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত করার ঘোষণা দেন। অযোক্তিক আকাশকুসুম ও গাঁজাখুরি কল্পনা এবং ব্যকরনগত ভুল থাকার পরও ‘মাইন ক্যাম্ফ’ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত জার্মান জাতির কাছে আশার আলোকবর্তিকা হিসেবে স্থান করে নেয়। এ বইটি তরুন জার্মানরা সাদরে গ্রহণ করে।
জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আবার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। তার উগ্র স্পষ্ট মতবাদ, বলিষ্ঠ বক্তব্য জার্মানদের আকৃষ্ট করল। দলে দলে যুবক তার দলের সদস্য হতে আরম্ভ করল। সমস্ত দেশে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন হিটলার।
১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্ট্রেসম্যানের অকস্মাৎ মৃত্যু হলে জার্মানিতে প্রজাতন্ত্র রক্ষার আর কোনো উপর্যুক্ত কোনো লোকছিলো না ।১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ভয়াবহ অর্থমন্দা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তাদের অর্থনীতি খুব বাজে অবস্থায় পতিত হয়। ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র জার্মানিকে ঋণ স্বরুপ অর্থ সাহায্য দেওয়ার অক্ষমতা প্রকাশ করলে জার্মানীর অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। ফলে জার্মানির উপর ধার্য করা ক্ষতিপূরন তারা দিতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ কারনে ১৯৩১ সালে তারা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে। অর্থনৈতিক মন্দার ফলে এই সরকারের প্রতি জার্মান জনগনের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এর সুযোগে ১৯৩০ সালের নির্বাচনে নাৎসি ও কমিউনিস্ট দল জার্মান বহু আসনে জয়ী হয়।
১৯৩২ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোট পেলেন কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন না। হিটলার বুঝতে পারল ক্ষমতা অর্জন করতে গেলে অন্য পথ ধরে অগ্রসর হতে হবে। কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ায় হিটলার পার্লামেন্ট ভেঙে দিলেন। এবার ক্ষমতা দখলের জন্য শুরু হলো তার ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত। বিরোধীদের অনেকেই খুন হলেন। অনেকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে গেল। বিরোধী দলের মধ্যে নিজের দলের লোক প্রবেশ করিয়ে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি করলেন। অল্পদিনের মধ্যেই বিরোধী পক্ষকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হিটলার হয়ে উঠলেন শুধু নাৎসি দলের নয়, সমস্ত জার্মানির ভাগ্যবিধাতা।
বৃদ্ধ প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ পরিস্থিতির চাপে পড়ে হিটলারকে প্রধানমন্ত্রী তথা চ্যান্সেলর করতে বাধ্য হন । ১৯৩৩ সালের অক্টোবরে হিটলার জাতিপুঞ্জ থেকে জার্মানির সদস্যপদ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ১৯৩৪ সালের ২ আগস্ট হিন্ডেনবার্গ মারা গেলে হিটলার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উভয় পদ একীভূত করে জার্মানির সর্বময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির হৃৎ গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করে নিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন। হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে।
হিটলারের এই উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছিল ইহুদিদের বিরুদ্ধে তার প্রচার। জার্মানদের মধ্যে হিটলার ইহুদি বিদ্বেষের বীজকে রোপণ করে দেন। দেশ থেকে ইহুদি বিতাড়নই ছিল তার নাৎসি বাহিনীর প্রধান উদ্দেশ্য। দেশের আনাচে কানাচে ইহুদি বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। শুরু হলো তাদের ওপর লুটতরাজ, হত্যা।
হিটলার চেয়েছিলেন এভাবে ইহুদিদের দেশ থেকে বিতাড়ন করবেন। কিন্তু কোনো মানুষই সহজে নিজের আশ্রয়স্থল ত্যাগ করতে চায় না। ১৯৩৫ সালে নতুন আইন চালু করলেন হিটলার। তাতে দেশের নাগরিকদের দুটি ভাগে ভাগ করা হলো, জেন্টিল আর জু। জেন্টিল অর্থাৎ জার্মান, তারাই খাঁটি আর্য, জু হলো ইহুদিরা। তারা শুধুমাত্র জার্মান দেশের বসবাসকারী, এদেশের নাগরিক নয়। প্রয়োজনে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। দেশজুড়ে জার্মানদের মধ্যে গড়ে তোলা হলো তীব্র ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব। ইহুদীরে নিয়ে আমরা পরে আলোকপাত করব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পথে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ইউরোপের মিত্রপক্ষ ও জার্মানদের মধ্যে যে ভার্সাই চুক্তি হয়েছিল তাতে প্রকৃতপক্ষে জার্মানির সমস্ত ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল। রাইন ভূমিকে সেনামুক্ত করার কথা ও জার্মানিকে যুদ্ধ শুরুর অপরাধে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য করে জার্মানির উপর জোর পূর্বক চাপিয়ে দেওয়া ভার্সাই চুক্তির ধারাগুলো দেখে তিনি অবাক-বিস্মিত ও মনে মনে রাগান্বিত হন।
১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জার্মানির হৃৎ গৌরব পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং তিনি একে একে ভার্সাই চুক্তির শর্তগুলো মানতে অস্বীকার করেনিজের শক্তি ক্ষমতা বিস্তারে মনোযোগী হয়ে ওঠেন।১৯৩৪ সালে হিটলার রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে নিজেকে জার্মানির ফুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেন এবং অল্পদিনের মধ্যে নিজেকে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। তার এই সাফল্যের মূলে ছিল জনগণকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা। তিনি দেশের প্রান্তে প্রান্তে ঘুরে ঘুরে জনগণের কাছে বলতেন ভয়াবহ বেকারত্বের কথা, দারিদ্র্যের কথা, নানা অভাব-অভিযোগের কথা।হিটলার তার সমস্ত ক্ষমতা নিয়োগ করলেন দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে। তার সহযোগী হলেন কয়েকজন সুদক্ষ সেনানায়ক এবং প্রচারবিদ। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত প্রদেশে বিশাল সৈন্য সমাবেশ করলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই সন্ধির চুক্তি ভঙ্গ করে রাইনল্যান্ড অধিকার করলেন। অস্ট্রিয়া ও ইতালি ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হলো জার্মানির সাথে।ইতালির সর্বাধিনায়ক ছিলেন মুসোলিনি। একদিকে ইতালির ফ্যাসিবাদী শক্তি অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি।
বিশ্বজয়ের আকাঙ্ক্ষায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে ইতালি। প্রথমে আলবেনিয়া ও পরে ইথিওপিয়ার বেশ কিছু অংশ দখল করে নেয়।অবশেষে হিটলার পোল্যান্ডের কাছে ডানজিগ ও পোলিশ করিডর দাবি করলেন। যাতে এই অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ ঘটাতে পারেন। পোল্যান্ডের সরকার তার এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেন। পোল্যান্ডের ধারণা ছিল হিটলার তার দেশ আক্রমণ করলে ইউরোপের অন্য সব শক্তি তার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাদের সম্মিলিত শক্তির সামনে জার্মান বাহিনী পরাজিত হবে।
এবার ১৯৪০ সালের ১০ মে এক সাথে চারটি দেশ আক্রমণ করে জার্মানী। ফরাসিরা ভেবেছিল আক্রমণ আসবে ফ্রান্স জার্মানী সীমান্তের রণরেখা ম্যাগিনোট লাইনের ওপর। অথবা বেলজিয়ামের ভিতর দিয়ে আরদেন হয়ে। তারা ভেবেছিল জার্মানীর প্যানজার বাহিনী আরদেনের জঙ্গল ভেদ করে আসতে পারবে না।
১৪ই মে নেদারল্যান্ডের পতন ঘটলো। ১৪ই মে আরদেন থেকে জার্মান বাহিনী বেরিয়ে এসে দিশেহারা মিত্র সেনাদের ছিন্নবিছিন্ন করে প্রবল বেগে এগোতে থাকল। ডানকার্ক বন্দর দিয়ে তড়িঘড়ি ফরাসি ও ব্রিটিশ অভিযানবাহিনীর সেনা পশ্চাদপসরণ শুরু হলো। ২৬শে মে থেকে ৪ঠা জুন ইতিহাসের বৃহত্তম সেনা অপসারণের কাজ শেষ হলো। তবে ফেলে আসতে হলো বেশীরভাগ যন্ত্রাদি। এরমাঝে ২৭শে মে বেলজিয়ামের পতন হলো।
ছবিঃ Rolling Stone
১৪ই জুন প্যারিসের পতন ঘটল। ১৬ই জুন প্রধানমন্ত্রী রেনো পদত্যাগ করলেন । ২২শে জুন জার্মান-ফরাসি এবং ২৪শে জুন জার্মান-ইতালীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফ্রান্সের বেশিরভাগ এলাকা জার্মানী নিয়ে নেয়। অল্প কিছু জায়গা জুড়ে পেঁত্যা একটি নিরপেক্ষ কিন্তু জার্মানীর প্রভাবাধীন সরকার গঠন করেন। এটি ভিশি ফ্রান্স নামে পরিচিত হয়।
১২ই অক্টোবর ১৯৪০ বুখারেস্টে জার্মান সৈন্য অবতরণ করে। এতে কুটনৈতিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিরক্ত মুসোলিনি ১৯৪০ সালের ২৮ অক্টোবর আলবেনিয়া থেকে গ্রিস আক্রমণ করলেন। কিন্তু গ্রিকরা যে শুধু আক্রমণ প্রতিহত করল তাই না, উল্টো ডিসেম্বরের মধ্যে আলবেনিয়ার এক-তৃতীয়াংশ দখল করে গেলে।
ফ্রান্সের পতনের পর ১৯৪১ সালের ২২ জুন সমস্ত চুক্তি ভঙ্গ করে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করল।অপারেশন বারবারোসা নামে এই অপারেশেনে তিনটি বড় বড় সেনা দলে বিভক্ত জার্মান বাহিনীর সংখ্যা ত্রিশ লক্ষের কম ছিল না। মোট দেড়শটি বিভিন্ন ডিভিশনের সাথে ছিল তিন হাজার ট্যাংক এবং অজস্র আর্টিলারি পিস। ধরা হয় বিংশ শতাব্দীর সেরা আর্মি ছিল রাশিয়া দখল করতে যাওয়া হিটলারের জার্মান বাহিনী।
জার্মানরা প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলে মস্কোর দিকে। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল অধিকার করলেও শীত আসতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল জার্মানরা। তারা পিছু হটতে আরম্ভ করল। এই সুযোগে রুশ গেরিলা বাহিনী আঘাত হানতে থাকে। শীত শেষে আবার জার্মানরা আক্রমণে আসে। এবার তাদের তেলের সংকট দেখা দিলে চেচনিয়ার দিকে হাত বাড়ায়। রাশানরা দখলে রাখতে পারবে না জেনে তেলের খনিতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
স্টালিন গ্রাডে প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলার পর, ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করল জার্মান বাহিনী। এর আগেই ৩০ জানুয়ারি বন্দী করা হয়েছিল ফিল্ডমার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাসকে। স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান সৈন্য মারা পড়েছিল আর বন্দী হয়েছিল আরও ৯৫ হাজার যার মধ্যে মাত্র ৫-৬ হাজার জার্মানকে জীবিত ফেরত দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।
১৯৪৫-এর প্রথমার্ধে দুটি ফ্রন্ট থেকে জার্মান সৈন্যরা ক্রমাগত পিছু হটছিল। পিছাতে পিছাতে এক সময় তারা নিজেদের ভূখন্ডে এসে ঠেকে। একদিকে, সোভিয়েত লাল ফৌজ বা রেড আর্মি এবং অন্যদিকে, পশ্চিমা মিত্র জোট উভয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করছিল। তবে এক্ষেত্রে রেড আর্মি ছিল অগ্রগামী।
ইভা ব্রাউনের সাথে হিটলারের প্রেম
হিটলার-ইভা (aftenposten.no)
হিটলারের সঙ্গে ১৬ বছরের একত্রবাসের সময় ইভার শুধু একটাই ইচ্ছা ছিল, হিটলারকে বিয়ে করা। ১৯৪৫ সালে যখন জার্মানের পতন হয় তার আগ মূহুর্তে হিটলার আর ইভা বিয়ে করেন। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যক্রমে ইভার স্বপ্ন সত্যি হয় যে সে হিটলারকে বিয়ে করতে পেরেছে। এর পরেই আত্মহননের কোলে ঢলে পড়েন তারা। মাত্র একদিন স্থায়ী হয়েছিল তাদের এই বিয়ে। ঐ সময় ইভার বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর।
মজার ঘটনা হল আত্ম হত্যার পূর্বে হিটলার একটি উইল লিখে যান যেখানে হিটলার বলেন
‘আমি এবং আমার স্ত্রী শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার এবং আত্মসমর্পণের অপমান থেকে বাঁচতে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছি। আমাদের ইচ্ছা আমাদেরকে যেন মৃত্যুর পরপরই আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়। যেখানে আমি আমার জনগনের জন্য ১২ বছরের সেবার সময়কালে প্রতিদিনের কাজের সেরা অংশটি সম্পন্ন করেছি সেখানেই যেন আমাদেরকে আগুনে পোড়ানো হয়।’
হিটলারের ইহুদী বিদ্বেষ
প্রেমে মত্ত টিনেজ বয়সী চিরন্তন প্রেম কাহিনীর মত ছেলেটি মাঝে মাঝে মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকতো। বাংলা সিনেমার মত মেয়েটির বাবা ধনাট্য ব্যবসায়ী। মেয়েটি তাই থাকত উঁচু পাচিল ঘেরা আলিসান বাড়িতে। মাঝে মাঝেই ছেলেটি তার পোষা প্রিয় কুকুরকে গেটের ফাঁক দিয়ে অই বাড়িতে ঢুকিয়ে দিত । আর কুকুরটার মুখে থাকত প্রেমপত্র।
তেমনি একদিন প্রেমপত্র সহ কুকুরটাকে পাঠায় মেয়েটির বাড়িতে। কিন্তু কুকুরটি আর ফিরে আসে না। ছেলেটা সারারাত অপেক্ষা করে, সকালে চলে গেল। কারন কুকুরটি ছিল ছেলেটির মায়ের দেওয়া শেষ উপহার। পরদিন আবার মেয়েটার বাড়ির সামনে গেল। দেখতে পেল বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে প্রিয় কুকুরটা মরে পড়ে আছে । মেয়ের ভাইয়েরা নির্মমভাবে কুকুরটিকে মেরে ফেলে।
কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি চলে আসলো অই বাড়ির সামনে থেকে। আর কোনদিন সে অই বাড়ির সামনে যায়নি। ছেলেটি মারা যাবার অনেক পরে মেয়েটা বলেছিল, ছেলেটাকে মনে মনে সেও ভালবাসতো। কখনই সাহস করে বলা হয় নাই।
ভিয়েনার সেই মেয়েটার নাম স্টিফানি আইজ্যাক। আর চালচুলোহীন ওই রাস্তার ছবি আঁকিয়ে ছেলেটার নাম এডলফ হিটলার। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার ৬০ লাখ ইহুদিকে প্রাণে মেরেছিলেন যার মূলে ছিল যে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভব তার পেছনে স্টিফানির প্রেম ও বিরহ যাতনার আঘাতই দায়ী। কারন কুকুর মারা পরে হিটলারের ইহুদিদের প্রতি প্রচন্ড বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে গোটা ইহুদি জাতির ওপর তার মনটা বিষিয়ে ওঠে।
আরো একটি কারন হিসেবে অনেকে মনে করেন, হিটলারের মা এক ইহুদী বাসায় কাজ করতেন সেখানে তার মায়ের উপর প্রচন্ড অত্যাচার করা হত যা দেখে হিটলারের মনে প্রচন্ড ইহুদী বিদ্বেষ জিইয়ে ছিল।
মজার ব্যাপার হল এডওয়ার্ড ব্লচ ছিলেন একজন সম্মানিত ইহুদি চিকিৎসক যিনি হিটলারের পরিবারের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন। তিনি অস্ট্রিয়ার নিম্ন শ্রেণীর মানুষদের চিকিৎসা করতেন। হিটলার যখন তীব্র ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত ছিলেন তখন এডওয়ার্ড ব্লচ প্রথম হিটলারকে দেখার জন্য তার গৃহে যান। ১৯০৭ সাল পর্যন্ত তিনি হিটলারের পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন। হিটলারের মা যখন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তখন ডাক্তার ব্লিচ হিটলারের মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত চিকিৎসা করেন বিনা খরচে।
২য় বিশ্ব শুরু হলে এত ইহুদী বিদ্বেষী হিটলার তার ছেলেবেলার পারিবারিক চিকিৎসক ইডুয়ার্ড ব্লচকে গ্রেফতার করেন নি। জার্মান বাহিনী যখন অষ্ট্রিয়া দখল করে তখন ডা. ব্লচ হিটলারের কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠান। হিটলার তাকে না গ্রেফতার করার আদেশ প্রদান করেন!
শেষ কথা
একজন হিটলার যে কিনা সাধারণ এক সৈনিক থেকে অসাধারণ একজন হিটলার হয়ে উঠেছিল। একজন হিটলার যেভাবে দুনিয়াকে যেভাবে কাপিয়ে দিয়েছে তা অবিস্মরণীয়। হিটলার জন্ম দিয়েছে এযাবত দুনিয়ার সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের। হয়ত ইতিহাস অন্য রকম হত যদি না সে একরোখা আর জেদী স্বভাবের হত। হিটলারের জেদ এমনি ছিল যে তার ভাগিনা ১৯৩৯ সালে তার বিরুদ্ধে সংবাদ পত্রে বিবৃতি দেওয়ার পরে জার্মান বাহিনী সে ভাগিনার বাড়িতে বোমা ফেলেছিল !
তথ্য ও ছবিঃ নানা ওয়েব পোর্টাল